জেনে নিন রমজানের শ্রেষ্ঠ আমলসমূহ
প্রকাশিত:
১১ মে ২০২০ ২০:২৪
আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ০৫:৪৯

মুসলিম উম্মাহর পবিত্রতম মাস মাহে রমজান চলছে। দীর্ঘ এক মাস ব্যাপী সেই পবিত্রতায় আচ্ছন্ন হবে সব মানুষের হৃদয়, পরিচ্ছন্ন হবে কলুষিত মন, আত্মহারা ব্যক্তি খুঁজে পাবে নিজের প্রকৃত পরিচয়- সে আল্লাহর বান্দা। ন্যায়-নিষ্ঠার এই বসন্ত মাসে পুরনো সব পাতা ঝেড়ে ফেলে মানবতার মহীরুহ ফিরে পাবে নতুন সজীবতা।
বছরে আমরা একবার পাই পবিত্র রমজান মাস। এই মাস প্রকৃতপক্ষে আমাদের জন্য একটি পাঠশালা। জীবনের একটা বড় সময় আমরা সবাই বিদ্যালয়ে কাটাই, বিদ্যার্জনের জন্য ব্যয় করি। তারপর অর্জিত সেই জ্ঞান দিয়েই পরবর্তী জীবন পরিচালনা করি। ঠিক তেমনি রমজানও আমাদের জন্য একটি বিদ্যালয়, অনুশীলনের একটি মোক্ষম সময়। এখান থেকে আমরা শিখব বছরের বাকি ১১ মাস সঠিক সরল পথে কাটানোর অনুপম শিক্ষা। তাই এই একটি মাসের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের প্রতিটি দিন যদি আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে পারি তাহলে বছরের বাকি সময়ও জামাতে নামাজ আদায় করা সহজ হয়ে যাবে।
রমজানের প্রতিটি দিনকে যদি মিথ্যা, গিবত, হিংসা ও যাবতীয় মন্দ কর্ম থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি তাহলে আমাদের বছরের প্রতিটি দিনই হতে পারে রমজানের মতো উজ্জ্বল ও পবিত্র। নেক আমল করার বসন্ত মাস হলো রমজান মাস। কারণ রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে পর্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলেন। হাদিস শরিফে এসেছে- ‘রমজান আসলে জান্নাতকে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলা হয় শয়তানদেরকে।’ (বুখারি : ৩২৭৭)। তাই রমজানে যত ইচ্ছা আমল করুন, ভালো কাজ করুন। সারা বছরের জন্য পাথেয় সঞ্চয় করুন।
রমজানের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আবশ্যকীয় যে আমলটি সেটি হচ্ছে রোজা। রোজা ঈমানের অংশ, ইসলামের পাঁচ রোকনের একটি। রোজা আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যন্ত প্রিয় আমল এবং এর মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহ তায়ালার অতি নিকটে পৌঁছতে পারে খুব সহজেই। কারণ অন্য যেকোন আমলেই রিয়া বা লোক দেখানোর একটা বিষয় থাকে। কিন্তু রোজার মধ্যে এই বিষয়টির কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই কেউ যদি রমজানের রোজা রাখে তো সেটা একমাত্র আল্লাহর জন্যই হবে। এ জন্যই তো রোজাদারের প্রতিদানের বিষয়টি আল্লাহ সরাসরি নিজের দায়িত্বে নিয়ে নিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমলই তার জন্য, শুধু রোজা ব্যতীত। কারণ রোজা আমার জন্য। বান্দা পানাহার পরিহার করে শুধু আমার জন্যই। সুতরাং বান্দাকে রোজার প্রতিদান আমি নিজেই দেব। (বাইহাকি : ৩০৫)। এ ছাড়াও রোজাদারের জন্য রয়েছে মহান দুটি সুসংবাদ। একটি হলো রোজাদারের জন্য তার পিছনের জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যেমন বর্ণিত হয়েছে- যে ব্যক্তি রমজানে রোজা রাখবে পরিপূর্ণ ঈমানের সঙ্গে, সওয়াবের প্রত্যাশা করে, ক্ষমা করে দেওয়া হবে তার বিগত জীবনের সব গুনাহ। (বুখারি : ২০১৪ ) আর দ্বিতীয় সুসংবাদটি হচ্ছে, শুধু রোজাদারের জন্যই নির্ধারিত থাকবে জান্নাতের বিশেষ একটি দরজা।
যেমন বর্ণিত হয়েছে- কেয়ামতের দিন মুজাহিদকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে বাবুল জিহাদ দিয়ে, সদকাকারীদেরকে ডাকা বাবুস সদকা দিয়ে, আর রোজাদারকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে বাবুর রাইয়্যান অর্থাৎ রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে। (মুসলিম ১০২৭) সুবহানাল্লাহ! কত মহান ফজিলত। এ জন্য আমাদের রোজাও এ রকম মহান হতে হবে। রোজা রেখে কোনো অন্যায় কাজ করা যাবে না, মিথ্যা বলা যাবে না, গিবত করা যাবে না, হিংসা করা যাবে না। যাবতীয় অশ্লীলতা থেকও আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে।
শুধু অশ্লীল কেন, অনুত্তম এবং অভদ্র কোনো কাজও না করা আবশ্যক। নবী (সা.) বলেছেন, রোজা হলো রোজাদারের জন্য ঢালস্বরূপ। সুতরাং কোনো রোজাদার যেন অশ্লীল কাজ না করে এবং তার রোজার কথা ভুলে না যায়। আর কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে কিংবা তার সঙ্গে হাত বাড়াবাড়ি করে তো যেন বলে দেয় যে আমি রোজাদার। (বুখারি : ১৮৯৪)। এই হাদিসের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে রোজাদারের আত্মমর্যাদার বিষয়টি ফুটে উঠে। একজন রোজাদার অনেক সম্মানিত ব্যক্তি, যেমন আল্লাহর কাছে তেমন মানুষের কাছে। আল্লাহ আমাদের রোজা ও রমজানের যাবতীয় আমল কবুল করে নিন। আমিন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: