হাদিস অনুযায়ী মধুর উপকারিতা
প্রকাশিত:
১০ মার্চ ২০২২ ২২:২৯
আপডেট:
১০ মার্চ ২০২২ ২২:৪৩

মধু শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি মূলত সুস্বাদু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যনির্যাস। এছাড়াও মধু যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন চিকিৎসার ক্ষেত্রে মধুর বিশেষ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। মধুর নিরাময়শক্তি বিরাট ও স্বতন্ত্র ধরনের। আর মধুর উপকারিতা ও সুফল সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কথা এসেছে।
আল্লাহর হুকুম, রহমত ও কুদরতে মধু প্রতিটি রোগের ওষুধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন : "...তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। ..." (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৬৮-৬৯)
অন্যদিকে বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায়, রাসুল (সা.) মধু ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, ‘আব্দুলাহ্ ইব্ন মাস'ঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন- তোমরা কোরআন ও মধু দিয়ে ব্যাধি নিরাময়ের ব্যবস্থা করবে।’ (ইব্ন মাজাহ, আস-সুনান, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১১৪২, হাদিস : ৩৪৫২)
রাসুল (সা.)-এর কাছে এক সাহাবি এসে তার ভাইয়ের পেটের অসুখের কথা বললে রাসুল (সা.) তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন এবং এতে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (বুখারি, আস-সহিহ, খ. ৫, পৃ. ২১৫২, হাদিস : ৫৩৬০)
মধুর মধ্যে রয়েছে অনেক রোগের প্রতিষেধক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন : তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে। (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৬৯)। আর যেকোনো রোগীকে মধু পান করানো হলে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (আল-বাইহাকি, আস-সুনানুল সুগরা, খ. ৮, পৃ. ৩৪৫, হাদিস : ৩৯৫৮)
গ্লুকোজের ঘাটতিতে হৃৎপেশির শক্তি কমে যায়। মধুর ব্যবহার এ ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। হাঁপানি রোগে মধুর স্থান সবার ওপরে। প্যারিসের ইনস্টিটিউট অব বি কালচারের পরিচালক রিমে কুভেন বলেন : রক্তক্ষরণ, রিকেট, ক্যান্সার এবং শারীরিক দুর্বলতায় মধুর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। চিনির পরিবর্তে শিশুদের মধু খেতে দেওয়া হয়। চিনি দন্তক্ষয় ঘটায়, কিন্তু মধু তা করে না। মধু ব্যবহারে নবজাতক স্বাস্থ্যবান ও সবল হয়ে ওঠে। (ইবনুল কায়্যিম, তিব্বুন নববী, পৃ. ৫৬)
এক চামচ বাদাম তেলের সঙ্গে দুই চামচ মধু মিশিয়ে কাটা বা পোড়ার ক্ষতে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। ইনফেকশন, সাধারণ ঘা, ত্বকের আলসার, পচা-গলা ঘা মধু ব্যবহারে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়। নারীদের গোপন অঙ্গের অসহনীয় চুলকানিতে মধুর ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর। (মাসিক আশরাফ, এপ্রিল ২০০০. পৃষ্ঠা ২৬,২৭)
মধুর মূল উপাদান হচ্ছে পানি, শর্করা বা চিনি, এসিড, খনিজ, আমিষ ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। শর্করাগুলোর মধ্যে থাকে লেকটোলেজ, ডেকস্ট্রোজ, মলটোজ, ডাইস্যাকারাইড এবং কিছু উচ্চমানের চিনি। মধুতে যেসব এসিড পাওয়া যায়, সেগুলোর নাম সাইট্রিক, ম্যালিক, বুটানিক, গ্লুটামিক, স্যাক্সিনিক, ফরমিক, এসিটিক, পাইরোগ্লুটামিক ও অ্যামাইনো এসিড। আর মধুতে মিশ্রিত খনিজ দ্রব্যগুলো হচ্ছে পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, সিলিকা, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড, সালফেট, ফসফেট, কপার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি। থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, ভিটামিন কে ও ফলিক এসিড নামের ভিটামিন মধুতে বিদ্যমান থাকে। (জিয়া আল-মুকাদ্দিসি, কিতাবুল আমরাদি ওয়াল কাফফারাতি ওয়াত তিব্বি ওয়ার রুকিয়্যাত, খ. ৪, পৃ. ১১)
মধু সহজেই পরিপাক হয়। শর্করা থাকায় তা সহজেই শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। মধুর ক্যালরি উৎপাদনক্ষমতা অত্যন্ত বেশি। প্রতি কেজি মধুতে ৩১৫৪ থেকে ৩৩৫০ ক্যালরি পরিমাণ শক্তি থাকে। মধু শক্তি জোগানোর পাশাপাশি ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম সরবরাহ করে। মধু থেকে প্রসাধনীও তৈরি হয়। ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষায় মধুর ভূমিকা খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। যেসব ভিটামিন মানুষের শরীরে প্রয়োজন, মধুতে সব ভিটামিন রয়েছে। যেমন- ভিটামিন এ, বি, সি ইত্যাদি। (শামসুদ্দীন ইব্ন কায়্যিম, আত-তিব্বুন নববী, খ. ১, পৃ. ৬৬)
এসএন/তাজা/২০২২
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: