শুধু শেষে গোল খাওয়ার ‘রোগ’ নয়, আগে গোল করার ‘কুফা’ও আছে গার্দিওলার
প্রকাশিত:
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৫
আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১০:৫৭

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে কাল রাতে ২০টি শট নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এই পরিসংখ্যান দিয়ে কি কিছু বোঝা যায়? যায়, যদি আরেকটি পরিসংখ্যানে চোখ রাখেন—পেপ গার্দিওলা ২০১৬ সালে সিটির কোচ হয়ে আসার পর ইতিহাদে যেকোনো প্রতিযোগিতা মিলিয়ে আর কোনো দল এত শট নিতে পারেনি। অর্থাৎ সিটির পোস্টে ছোবল মারতে খুব বেশি বাধা পোহাতে হয়নি রিয়ালকে। নইলে শটসংখ্যা এত বেশি হতো না।
আরেকটি পরিসংখ্যান—চ্যাম্পিয়নস লিগে কাল রাতের ম্যাচসহ সর্বশেষ ৫ ম্যাচে শেষ ১৫ মিনিটে ৮ গোল হজম করল সিটি। এর মধ্যে কাল রাতে রিয়ালের কাছেই হজম করেছে ২ গোল। যে কারণে দুবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হেরেছে সিটি। শুধু রিয়াল নয়, লিগ পর্বে ফেইনুর্ড ও পিএসজির বিপক্ষেও এগিয়ে থেকে ম্যাচের শেষ দিকে গোল হজম করেছে গার্দিওলার দল। প্রিমিয়ার লিগেও একই ‘রোগ’–এ ধরেছে সিটিকে। এর সমাধান কী?
শুনুন কোচ গার্দিওলার মুখেই। তবে ম্যাচ শেষে তাঁর কথা শুনে সিটির সমর্থকেরা কিন্তু হতাশ হতে পারেন, ‘এ পরিস্থিতি কীভাবে সামলাতে হবে, দলকে তা বোঝানোর মতো যথেষ্ট যোগ্যতা আমার নেই। সত্যটা হলো, আমরা যথেষ্ট অটল নই। এমনটা বহুবার ঘটেছে।’
রিয়ালের কাছে প্লে-অফের প্রথম লেগে ৩-২ গোলে হেরেছে সিটি। অথচ প্রথমার্ধ শেষ করেছে ১-০ গোলে এগিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধে ৮৫ মিনিট পর্যন্তও এগিয়ে ছিল ২-১ গোলে। এরপর ৮৬ ও ৯২ মিনিটে দুটি গোল হজম করেছে সিটি। ৮৬ মিনিটে ব্রাহিম দিয়াজের গোলে সিটি গোলকিপার এদেরসনের বল ভালোভাবে ক্লিয়ার করতে না পারার ভূমিকা ছিল। যোগ করা সময়ে জুড বেলিংহামের গোলের নেপথ্যে ছিল রিকো লুইসের ডিফেন্ডিং ভুল।
গার্দিওলার কাছে শেষ দিকে তাঁর শিষ্যদের এভাবে গোল হজম নতুন কিছু নয়। তাই রাখঢাক না করেই সিটি কোচ বলেছেন, ‘২-১ গোলে এগিয়ে থাকার পর যেটা ঘটেছে, সেটা এই মৌসুমে ফেইনুর্ড, স্পোর্টিং লিসবন, ব্রেন্টফোর্ড, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষেও ঘটেছে। শেষ দিকে আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি এবং এটাই প্রথমবার নয়।’
তবে গার্দিওলাকে অন্য দুশ্চিন্তাও করতে হবে। সেটি আগে গোল করা নিয়ে। ভ্রকূটির কিছু নেই। আগে গোল করা সব সময় ইতিবাচক না–ও হতে পারে। অন্তত এর আগে রিয়াল-সিটির শেষ চারবারের সাক্ষাতে সেই ইঙ্গিতই রয়েছে। যে দল আগে গোল করেছে, তারাই শেষ পর্যন্ত বিদায় নিয়েছে!
২০১৯-২০ মৌসুমে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে রিয়াল গোল করে আগে। শেষ পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলের হারে রিয়ালই বিদায় নিয়েছিল। ২০২১-২২ মৌসুমে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে গোল করে সিটিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন কেভিন ডি ব্রুইনা। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোলের হারে সিটিই শেষ পর্যন্ত বিদায় নিয়েছিল সেমিফাইনাল থেকে। ২০২২-২৩ মৌসুমে সেমিফাইনাল প্রথম লেগে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র প্রথম গোলটি করার পর কী হয়েছিল সবারই জানা। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের হারে বিদায় নিয়েছিল রিয়াল। ২০২৩-২৪ মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম লেগে বের্নার্দো সিলভার গোলে এগিয়ে যাওয়া সিটি শেষ পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে হেরে বাদ পড়ে।
মজার ধারাটা খেয়াল করুন, এই চারবারের সাক্ষাতে প্রথমবার বিদায় নিয়েছে রিয়াল, পরেরবার সিটি, তারপর রিয়াল এবং এরপর আবারও সিটি। ক্রমটা খেয়াল করলে এবার কি বিদায়ের পালা তবে সিটির? গোলটাও তো সিটিজেনরাই আগে করেছে!
রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি অবশ্যই এখনই তেমন কিছু ভাবছেন না। ফিরতি লেগ আগামী বুধবার রাতে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। আনচেলত্তি জানিয়েছেন, এখনই ঢিলেঢালা হওয়ার সুযোগ নেই, ‘ফিরতি লেগে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু ফিরতি লেগ আমাদের এমনভাবে খেলতে হবে, ঠিক যেভাবে আমরা আজ (কাল রাতে) খেলেছি।’
গার্দিওলাও নিশ্চয়ই প্রথম লেগে পিছিয়ে পড়া থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চান। প্রতিপক্ষ যেহেতু রিয়াল, তাই আলাদা করে তেতে থাকার ব্যাপার তো আছেই। গার্দিওলার কোচিং ক্যারিয়ারে রিয়াল একমাত্র দল, যাঁরা স্প্যানিশ কোচের তিনটি দলকে তাঁদের মাঠে হারিয়েছে—বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ এবং এবার সিটি।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: