‘১০ নম্বর বিপদ সংকেতে’ বাংলাদেশ
প্রকাশিত:
২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৩৭
আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৪

‘আমরা যেন আলাদা না করি– জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া বা সাউথ আফ্রিকা... প্রতিটি ম্যাচই আন্তর্জাতিক ম্যাচ’– সিলেটে প্রথম টেস্ট শুরুর আগে জিম্বাবুয়েকে বেশ সমীহের চোখেই দেখছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। জিম্বাবুয়ের মতো দলও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এমন একটা আভাসও দিয়ে রেখেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মাঠের ক্রিকেটে সতীর্থ ক্রিকেটাররা যেন অধিনায়কের সেই কথার মান রাখতেই বেশ ব্যস্ত থাকলেন। স্বাগতিকদের অতি জঘন্য ব্যাটিং আর সফরকারীদের দারুণ প্রচেষ্টায় সিলেট টেস্ট হারের পথে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস ছিল মোটে একটি। ১০৫ বলে ৫৬ রান করেছিলেন মুমিনুল হক। দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও ব্যর্থ টপ-অর্ডার। এবার দলের ‘ইজ্জত’ কিছুটা বাঁচানোর চেষ্টা চালালেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ফিফটি আর শেষদিকে জাকের আলির প্রতিরোধে দেড়শোর্ধ্ব লিড দাঁড় করায় বাংলাদেশ। যা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট হচ্ছে না।
যদিও বৃষ্টিবিঘ্নিত সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ইতিবাচক হওয়ারও যথেষ্ট কারণ ছিল। বাংলাদেশ চতুর্থ দিন শুরু করে ১১২ রানের লিড নিয়ে। হাতে তখনও ছিল ৬ উইকেট। সিলেট টেস্টের পরিস্থিতি বিবেচনায় একেবারেই খারাপ অবস্থানে ছিল না বাংলাদেশ। কিন্তু খেলা শুরুর মাত্র দ্বিতীয় বলেই যেন ‘কি হতে যাচ্ছে’ সেটি দেখা হয়ে গেল।
দিনের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় খুবই বাজে শর্ট ছিল। আগের দিন থিতু হয়ে গিয়েছিলেন শান্ত। প্রতিপক্ষকে বড় টার্গেট দিতে হলে আজকের সকালটা একটু দেখে শুনে শুরু করা উচিত ছিল। বড় লিডের জন্য তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ।
গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল হকও পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে বলছিলেন, ‘কালকে (আজ) সকালে খেলা হয়তো খুব কঠিন হয়ে আসবে। সে সময়ে ক্যাল্কুলেটিভভাবে ব্যাটিং করা লাগবে, একটা সময় খেলাটা একটু ছাড়বে। সে সময়ে আমরা খেলাটা ধরতে পারবো।’ আরও বলছিলেন, ‘৩০০ হলে খুব ভালো। সেটা না হলে ২৭০ থেকে ২৮০ এর ওপরে। আর ৩০০ হলে আমরা ভালো জায়গায় থাকবো। আত্মবিশ্বাস এই কারণে শান্ত জাকেরের পরে আমাদের টেলএন্ডারে যারা রয়েছেন তাইজুল তারপরে হাসান তারা ব্যাটিং করতে পারে। এজন্য আত্মবিশ্বাসটা বেশি।'
যদিও মাঠে পরিকল্পনার ছিঁটেফোটাও দেখা যায়নি। বিধ্বংসী বোলার মুজারাবানিকে মারতে গিয়ে উইকেট উপহার দিয়েছেন শান্ত। এরপর তারই দেখানো পথে হেঁটেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ এবং সাম্প্রতিক সময়ে টাইগার ব্যাটিংয়ের ‘ক্ষত’ জোড়াতালি দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করা তাইজুল ইসলাম। সুযোগ পেয়েও প্রতিপক্ষকে বড় টার্গেট দিতে পারেনি। একের পর এক ব্যাটারদের যাওয়া আসার মিছিলে মাত্র ১৭৩ রানের লিড দিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম টেস্টে জয় পেতে জিম্বাবুয়ের দরকার ১৭৪ রান। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ শুরু পেয়ে গেছে সফরকারীরা। কোনো উইকেট না হারিয়েই দলটির সংগ্রহ ৯৩ রান। অবিশ্বাস্য কোনো ঘটনা বা প্রকৃতির বাধা না থাকলে এ টেস্টের ভাগ্যও অনেকটা লেখা হয়ে গেছে। সিলেটে জিততে পারলে টেস্টে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়বে জিম্বাবুয়ে।
টেস্ট ফরম্যাটে দুই যুগ বয়সী টগবগে যুবক হলেও এখনো যেন ফরম্যাটটি বুঝে উঠতে পারছে না বাংলাদেশ। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যর্থতার পর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজকে ধরা হচ্ছিল আত্মবিশ্বাস ঝালিয়ে নেওয়ার মঞ্চ হিসেবে। তবে এই সিরিজের শুরুতেই যেন ‘রিয়েলিটি চেক’ হয়ে যাচ্ছে।
দলের খুতটাও আরও প্রকাণ্ড হচ্ছে। আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের মতো দলগুলো যেখানে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করছে, বাংলাদেশের অবস্থান ঠিক উল্টো মেরুতে। ঠিক যেন সিলেটের আবহাওয়ার মতো অনেকটাই, মেঘলা আবহাওয়ার মাঝে এক চিলতে রোদ কখনো বা দেখা মিলছে। তবে সেটি মেঘকে ঠিক আড়াল করতে পারছে না।
সিলেটে যখন জাতীয় দল টেস্ট নিয়ে ব্যস্ত, ঢাকায় চলছে প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগ পর্ব। নানা অনিয়মে এবারও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি ঢাকা লিগের। কদিন আগে আঞ্চলিক ক্রিকেটের সিন্ডিকেট নিয়ে ক্ষোভ ঝেরেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার নুরুল হাসান সোহান। দেশের ক্রিকেটের আবহাওয়া পূর্বাভাসে এখন কার্যত ‘১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের’ সাইরেন বাজছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: