বৃহঃস্পতিবার, ১৩ই মার্চ ২০২৫, ২৯শে ফাল্গুন ১৪৩১


শতবর্ষের অপেক্ষার অবসান


প্রকাশিত:
২৭ মে ২০২১ ২০:০৩

আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ২৩:১৪

ফাইল ছবি

মৌসুমের শেষপ্রান্তে এসেও করোনা চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে রোমাঞ্চ দেখাতে ছাড়ছে না ফুটবল। যেখানে প্রতিটি লিগের শেষ ম্যাচটা ছিল রোমাঞ্চে ভরপুর, সেখানে পিছিয়ে থাকবে কেন ইউরোপা লিগ ফাইনাল! ২২ পেনাল্টির টাই-ব্রেকার রোমাঞ্চ জিতে নিলো ভিয়ারিয়াল।

চ্যাম্পিয়নস লিগে সুযোগ না পাওয়া দলগুলোই মূলত জড়ো হয় ইউরোপের দ্বিতীয় স্তরের টুর্নামেন্ট হিসেবে খ্যাত ইউরোপা লিগে। আর একেই নিজের ঘর বানিয়ে নিয়েছেন ‘ইউরোপা লিগ মাস্টারক্লাস’ খ্যাত উনাই এমেরি।

গত সাত মৌসুমে ফাইনাল খেলেছেন পাঁচবার। এক আর্সেনাল বাদে প্রতিটি দলকে পাইয়ে দিয়েছেন শিরোপার স্বাদ। সেই এমেরিই এবার প্রথমবারের মতো ভিয়ারিয়াল সমর্থকদের মাতালেন শিরোপা জেতার আনন্দে।

ফাইনালের আগে ভিয়ারিয়ালকে তেমন পাত্তাই দেয়নি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইউনাইটেড লিজেন্ড পল স্কোলস তো তাদের লিগ পজিশন নিয়ে ঠাট্টাই করেছেন। বলেছেন, ‘লিগে সপ্তম হওয়া দলের সাথে আরামছে জিতবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড’!

কিন্তু মাঠে নামতেই নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ভিয়ারিয়াল। আর ২৯ মিনিটেই ইয়োলো শিবিরকে এগিয়ে দেন জেরার্ড মোরেনো। স্বপ্নের মতো একটা মৌসুম কাটিয়েও স্পেন দলে ডাক না পাওয়ার প্রতিশোধই যেন কড়ায়-গণ্ডায় নিয়ে নিলেন ফাইনালে গোল করে। তার গোলেই প্রথমার্ধটা এগিয়ে থেকেই শেষ করে ভিয়ারিয়াল।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেডকে সমতায় ফেরান এডিনসন কাভানি। বলতে গেলে পুরো ম্যাচের ওই সময়টাই যা একটু আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছিল ইউনাইটেডরা। বাকি সময়টাই উনাই এমেরি খেলে গিয়েছেন নিজের টিপিক্যাল স্টাইলে।

ফাইনাল, বিশেষ করে ইউরোপা লিগ ফাইনাল কীভাবে জিততে হয়, তা ভালোভাবেই জানা আছে তার। ৯০ মিনিটে ১-১ গোলে শেষ হওয়া ফাইনাল চলে গেল অতিরিক্ত টাইমে। তবে দুই দলের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল টাইব্রেকারে যাওয়ার জন্যই আগ্রহী তারা। আর টাইব্রেকার শুরু হতেই শুরু হলো আসল রোমাঞ্চ।

টাইব্রেকার মানেই তো রোমাঞ্চ- এটা নতুন করে বলার কী আছে? কিন্তু দুই দলই কেউ কাউকে একবিন্দু ছাড় দিতে নারাজ। দুই দলের সব খেলোয়াড়ের শট নেওয়া শেষ! তবুও অমীমাংসিত ম্যাচ। অর্থাৎ প্রথম ১০-১০ কুড়ি শটেও আসেনি কোনও ফলাফল। প্রতিটি শটই খুঁজে পেয়েছে জালের দেখা।

অগত্যা শট নিতে হাজির হলেন দুই গোলরক্ষক। ভিয়ারিয়ালের গোলরক্ষক গেরোনিমো রুল্লি ঠাণ্ডা মাথায় ফিনিশ করলেন বটে, কিন্তু পারলেন না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডেভিড ডি গিয়া। ডি গিয়ার দূর্বল শট থামিয়ে দিলেন রুল্লি।

এরপরই তাদের উল্লাস দেখে কে! নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের প্রথম শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসলো ভিয়ারিয়াল। আর সে আনন্দে নিজেও আরেকবার ভাসলেন উনাই এমেরি।

তবে ভিয়ারিয়ালের বেশ সুন্দর একটা গালভরা নাম আছে, ‘ইয়োলো সাবমেরিন’। নাম দিয়েই নিজেদের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করে তারা। হলুদ তাদের জার্সির রং, আর সাবমেরিন যেমন সমুদ্রের পানির নিচে থাকে, তেমনই অবস্থান তাদেরও। ক্লাব অভিষেকের ৭৫ বছর পর প্রথম লা লিগা খেলার সুযোগ পায় তারা।

বার্সা-রিয়ালের মতো জায়ান্টদের ভিড়ে আজীবন তলানিতেই ছিল তারা। কিন্তু শিরোপার স্বাদ তাদের পাওয়া হয়নি কখনও। তাদের সেরা ফলাফল ছিল ২০০৭-০৮ মৌসুমে। সেবার লা লিগার রানার্স-আপ হয়েছিল তারা। সেগুন্দা ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন; সব জায়গাতেই তাদের ফলাফল একটাই; রানার্স-আপ। শিরোপার সাথে তাদের আজীবনের আড়ি।

চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০০৬-০৭ মৌসুমে অনেকদূর গিয়েছিল তারা। কিন্তু নিজেদের লিজেন্ড রিকুইলমের পেনাল্টি মিসের খেসারত দিতে হয়েছিল সেখানে থেকেই। ক্লাব ইতিহাসের ৯৮ বছর পার করে অবশেষে শিরোপার স্বাদ পেল ভিয়ারিয়াল।

কথায় আছে ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’। শতবর্ষের কাছাকাছি এসে অবশেষে শিরোপা স্পর্শ করার সৌভাগ্য হলো তাদের। আর সেটাও উনাই এমেরি আর দানি প্যারেহোর হাত ধরে। শিরোপার জন্য কী না করেছে তারা, তরুণ হুয়ান ফয়েথ ফাটা নাক নিয়ে খেলে গিয়েছেন।

গত মৌসুমে ভ্যালেন্সিয়ার তাড়িয়ে দেওয়া দানি প্যারেহোকে দলে ভিড়েয়েছে তারা। আর্সেনাল থেকে বরখাস্ত হয়ে ভিয়ারিয়ালের দায়িত্ব নিয়েছেন উনাই এমেরি। তাই তো, দিনশেষে যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে অধিনায়ক ‘ওয়ান ক্লাব ম্যান’ মারিও গ্যাস্পার শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন, তখন বলতেই হয়, ফুটবল সত্যিই অনুপ্রেরণা আর রোমাঞ্চের গল্পে ভরপুর।


সম্পর্কিত বিষয়:

ফুটবল

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top