মৃতদের বন, গাছই যেখানে কফিন
প্রকাশিত:
১৩ মার্চ ২০২৫ ১২:৪৫
আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪৬

আপনি কি কখনো শুনেছেন এমন এক জায়গার কথা, যেখানে মানুষকে মাটির নিচে নয়, বরং গাছের ভেতরে কবর দেওয়া হয়?
ইন্দোনেশিয়ার টারাজা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে মৃত্যু মানে শুধু জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ। এই বিশ্বাস থেকে তারা একটি বিশেষ ধরনের কবর প্রথা অনুসরণ করে, যেখানে শিশুদের দেহ গাছের ভেতরে রাখা হয়।
যেভাবে চলে এই অদ্ভুত কবর দেওয়ার প্রক্রিয়া
কোনো শিশুর মৃত্যু হলে, তার পরিবার কফিনের পরিবর্তে একটি বড় গাছ বেছে নেয়। গাছের কান্ডে একটি ছোট গর্ত করা হয় এবং শিশুটির দেহ সেখানে রাখা হয়। পুনরায় গর্তটি আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে গাছ ধীরে ধীরে সেই জায়গাটি নিজের মধ্যে শোষণ করে নেয়। পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, শিশুটির আত্মা গাছের সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রকৃতির অংশ হয়ে যাবে। এই বিশেষ কবরস্থানকে বলা হয় Makam Pohon যার অর্থ গাছের সমাধি।
টারাজা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, গাছ হচ্ছে জীবনের প্রতীক। ছোট শিশুরা পৃথিবীতে তেমন একটা সময় কাটাতে পারে না, তাই তাদের গাছের ভেতর রাখলে তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে নতুন জীবন পায়।
টারাজা সম্প্রদায়ের মানুষ শুধু এই গাছের কবর দিয়েই থেমে থাকে না। তারা মৃতদের প্রতি বছর তাদের কবর থেকে তুলে আনে।
মৃত আত্মীয়দের পোশাক বদলায়, পরিষ্কার করে এবং পরিবারের সঙ্গে কিছুক্ষণ রাখে। এই বিশেষ রীতি Ma’nene নামে পরিচিত যেখানে মৃতদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়।
এটি কি অদ্ভুত নাকি এক অনন্য সংস্কৃতি?
আমাদের কাছে এটি বিস্ময়কর মনে হলেও টারাজাদের কাছে এটি খুবই স্বাভাবিক এবং শ্রদ্ধার বিষয়। তারা বিশ্বাস করে, মৃত্যু মানেই শেষ নয় বরং এটি প্রকৃতির সঙ্গে এক নতুন সংযোগের শুরু। এ ধরনের অদ্ভুত কিন্তু সুন্দর সংস্কৃতি আমাদের শেখায়, মানুষের বিশ্বাস আর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক কত বিচিত্র হতে পারে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: