সোমবার, ১৭ই মার্চ ২০২৫, ৩রা চৈত্র ১৪৩১


সঙ্গী খুঁজতে লোকালয়ে খানজাহান আলী মাজারের কুমির


প্রকাশিত:
১৭ মার্চ ২০২৫ ১১:০৩

আপডেট:
১৭ মার্চ ২০২৫ ১৯:০৭

ছবি সংগৃহীত

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক খানজাহান আলী মাজার দিঘিতে অস্তিত্ব সংকটে মিঠা পানির কুমির। প্রায় ৬শ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় দিঘিতে বিচরণ করে আসা মিঠা পানির কুমির না থাকায় দর্শনার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সঙ্গী খুঁজতে দিঘির কুমির লোকালয়ে। একবার নয় প্রায় ৯০ বার দিঘির কুমির লোকালয়ে এসেছে। দিঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে দ্রুত মিঠা পানির কুমির ছাড়ার দাবি জানিয়েছেন খাদেম ও দর্শনার্থীরা।

প্রায় ২শ একর আয়তনের বিশাল বাগেরহাটের হযরত খানজাহান আলী (র.) মাজার দিঘি। দিঘিটি আধ্যাত্মিক সাধক ধর্মপ্রচারক ও সমর নায়ক হযরত খানজাহান আলী (রহ.) খনন করার পর যাতে কেউ দিঘির সুপেয় পানি নষ্ট করতে না পারে সেজন্য দিঘিতে এক জোড়া মিঠা পানির কুমির ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই থেকেই বংশ পরম্পর দিঘিতে এই কুমির বসবাস করে আসছে। বয়স্কজনিত কারণে শতবর্ষী কালাপহাড় ও ধলাপাহাড় নামের কুমির দুটি মারা যায়। এরমধ্যে ২০০৫ সালে ২৪ জুন ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা ছয়টি মিঠা পানির কুমিরের মধ্যে চারটি দিঘিতে ছাড়া হয়। এরমধ্যে দিঘির পাড়ের অসাধু ব্যক্তিদের অত্যাচারে তিনটি মারা যায়। মাত্র একটি কুমির বেঁচে থাকায় কুমিরটি সঙ্গী না পাওয়ায় রাতের আধারে দিঘির আশপাশে বিভিন্ন বাড়ির পুকুরে চলে যায়।

সব শেষ ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে আধা কিলোমিটার দূরে খোন্দকার বাড়ির পুকুরে চলে যায়। এরপর খাদেমরা খবর পেয়ে কুমিরটি উদ্ধার করে পুনরায় দিঘিতে ছেড়ে দেয়।

এদিকে প্রাকৃতিকভাবে কুমির হিংস্র প্রজাতির প্রাণী হলেও দরগার কুমির ছিল এর বিপরীত। দর্শনার্থীরা গায়ে হাত বুলিয়ে অনেক সময়ে নিজ হাতে মুখের মধ্যে খাদ্য ঢুকিয়ে দিলেও কুমির কখনও হিংস্রতা দেখায়নি। এ কারণে দেশ-বিদেশের অনেক দর্শনার্থী মাজার জিয়ারত শেষে দিঘির কুমির দেখে ও স্পর্শ করে মুগ্ধ হতেন। তবে দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা বর্তমানে কুমিরের দেখা না মেলায় বেশি সময় মাজার এলাকায় থাকছেন না।

রাজশাহী থেকে আসা দর্শনার্থী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে এসেছি, মাজার জিয়ারত করেছি। দিঘির কুমির ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু সেটি সম্ভব হলো না। ছোটবেলায় এসেছিলাম, তখন কুমির দেখেছি। এখন সেটা না দেখে মন খারাপ লাগছে।

খুলনা থেকে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকে দিঘির কুমির দেখার গল্প শুনেছি, কিন্তু বাস্তবে এসে কিছুই দেখতে পেলাম না। এটি দিঘির ঐতিহ্যের অংশ, কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ দ্রুত এই দিঘিতে কুমির ছেড়ে নিঃসঙ্গ কুমিরের সঙ্গীর ব্যবস্থা করা হোক।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা আলী হোসেন, শৈশব থেকেই শুনে এসেছি খানজাহান আলীর মাজার দিঘিতে হাত দিয়ে কুমিরকে খাবার খাওয়ানো যায়। কিন্তু এখন এসে দেখলাম, দিঘিতে কোনো কুমিরের অস্তিত্ব নেই। একটিমাত্র কুমির থাকলেও সেটাকে দেখাই যাচ্ছে না। এভাবে ঐতিহ্য হারিয়ে গেলে মাজার এলাকায় দর্শনার্থীদের আনাগোনা কমে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, এখানে আসা মানুষ কুমিরকে দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতো। কিন্তু এখন কুমিরের সংখ্যা নেই বললেই চলে। একটা কুমির থাকলেও সে সঙ্গীর অভাবে লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক, পাশাপাশি এলাকাবাসীর জন্য বিপদজনক ও বটে। দ্রুত নতুন কুমির ছাড়া উচিত, না হলে আমাদের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।

খানজাহান আলী (রহ.) মাজার দিঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে দ্রুত মিঠা পানির কুমির ছাড়ার দাবি জানিয়ে মাজারের খাদেম ফকির জামাল হোসেন বলেন, বংশ পরম্পরায় এখানে কুমির ছিল, কিন্তু এখন কেবল একটিমাত্র কুমির দিঘিতে আছে। সঙ্গী না থাকায় সে লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। দ্রুত নতুন কুমির ছাড়া না হলে দিঘির ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে, দর্শনার্থীরাও হতাশ হচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা ও মাজার কর্তৃপক্ষের দাবি, দিঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নয়তো, ধীরে ধীরে এটি দর্শনার্থীদের আগ্রহ হারাবে এবং ঐতিহাসিক এই স্থান গুরুত্ব হারাবে।

এর আগে, ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পুরুষ (বড়) কুমিরটির মারা যায়। ২০২১ সালের ১২ জুন এই কুমিরটি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তখন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির ও স্থানীয় খাদেমদের সহায়তায় কুমিরটিকে ওপরে তোলা হয়েছিল। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে কুমিরটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে মোটামুটি সুস্থ ছিল পুরুষ কুমিরটি। স্থানীয় ফকিরদের দাবি-কুমিরের একটি চোখ অন্ধ ছিল।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top