মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


রোদের পর বৃষ্টি, অবরোধে স্থবির ঢাকা


প্রকাশিত:
১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৬

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৫ ০২:১৮

ছবি সংগৃহীত

‘সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এক জায়গায় আটকা পড়ে আছি। সামনের যানবাহনের কোনও হেলদোল নেই। শিক্ষার্থীরা কখন সড়ক থেকে সরে যাবে? জানার কোনও উপায়ও নেই। বিকল্প কোনও রাস্তা নেই যে চলে যাব। সড়ক সচলে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকারের লোকজন এসির বাতাস খাচ্ছে আর আমরা সাধারণ মানুষ সড়কে ভুগতেছি।’

বুধবার দুপুরে রাজধানীর সাতরাস্তার মুখে আটকা সিএনজি চালক আফজাল হোসেন আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন। তিনি চার ঘণ্টা ধরে এই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন।

ছয় দফা দাবিতে এদিন সকাল থেকে সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। যার ফলে সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট, ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কেও। ভোগান্তিতে পড়েন সড়কে চলাচলকারী মানুষজন।

সিএনজি চালক আফজাল বলেন, ‘আমরা তো অসহায় আমাদের এই ভোগান্তি দেখার মানুষ নেই। সরকারে যারা বসে আছেন, তারা তো জানেন এই আন্দোলনের কথা। তারা তো আইসা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। না পারলে প্রশাসনের কোনও প্রতিনিধিকে পাঠাক। সরকারের একজন তো অভিভাবক আছে নাকি! তার দায়িত্ব কী? আমাদের ভোগানো? আমি যাত্রী নামিয়ে দিয়েছি। দিনটা তো শেষ! মালিককে তো আজ জমার টাকার দিতে পারুম না।’

কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেলের গাড়ি নিয়ে সড়কে আটকা চালক মো. মিঠুন বলেন, ‘সাভার বাইপাইল যাব। সাতরাস্তার মোড়ে দুই ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। আমরা তো বুঝতেছি না। কখন ছাড়বে সড়ক। কোনও নির্দিষ্ট সময় জানতেও পারতেছি না। আমরা কারে কী কমু।’

আজমেরী পরিবহনের বাসচালক মো. রবি বলেন, ‘বাস ভরা যাত্রী ছিল। অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে সব যাত্রী একে একে সবাই নেমে গেছে। আমি আর হেল্পার মিলে এখন বসে আছি কতক্ষণে এই আন্দোলন থামবে আর চলে যাব। আমাদেরকে আটকে রাখছে। খালি বাস তবুও যেতে দিচ্ছে না।’

আরেক প্রাইভেটকার চালক বলেন, ‘নিজে ড্রাইভ করে এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। সব পণ্ড। আটকে আছি সেই সকাল থেকে। সরকারের উচিত দ্রুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা। ইতোমধ্যে সারা ঢাকা শহর স্থবির হয়ে গেছে।’

আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সড়কে আটকে থাকার কারণে সব মিটিং পণ্ড হয়ে গেছে। অপূরণীয় ক্ষতি আর ভোগান্তিতে আমরা সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের দাবি, অযৌক্তিক না যৌক্তিক তাতো আমাদের দেখার সুযোগ নেই। আমরা চাই দ্রুত সড়ক সচল হোক। কিন্তু সেটা চার ঘণ্টায়ও আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

আরেক প্রাইভেটকারের যাত্রী বলেন, ‘আমাদেরও চাওয়া আছে। সেটা কেউ বুঝছে না। আমরা চাই সুন্দরভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে। আড়াই ঘণ্টা ধরে আটকা। গাজীপুর যাব। অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। কোনও উপায় না পেয়ে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।’

সরেজমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল ১০টা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে গেছে পুরো ঢাকা। তেজগাঁও, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কাওরানবাজার, মগবাজার, এফডিসি মোড়, হাতিরঝিল, গুলশান, মালিবাগ, মৌচাকসহ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র যানজট। শুধু সড়ক নয়, তেজগাঁও, কারওয়ানবাজার, মহাখালী এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ইনকামিং রুটও স্থবির অবস্থায় রয়েছে।

সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বিকেল সোয়া ৩টা থেকে সরেজমিনে সাতরাস্তা মোড় এলাকায় দেখা যায়, সকাল থেকেই ছিল রোদ। তিনটার পর শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এর মধ্যেই সড়ক অবরোধের কারণে চারদিকে আটকে থাকা মানুষের ভোগান্তি চরমে। তবে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে, বিক্ষোভ করছে। রোদের সময় ক্রিকেট ও বৃষ্টির সময় বোতলকে ফুটবল বানিয়ে সড়কে খেলতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান কার্যনিবাহী সদস্য জুবায়ের পাটোয়ারী জানান, ‘আমরা আগের ছয় দফা দাবির সঙ্গে আরও একটি নতুন দাবি যুক্ত করে আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের সর্বশেষ দাবি হলো, ল্যাব এসিস্টেন্টদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। আমরা চাই না, কেউ পিয়ন হিসেবে যোগ দিয়ে পরে আমাদের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের এ ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের অনেক শিক্ষকও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, ‘ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর সাত রাস্তায় সড়ক অবরোধ করেছে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ইতোমধ্যে সচিব, কারিগরি ডিজি ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন। এখন বৃষ্টি পড়ছে, চারিদিকে ভোগান্তি চরমে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে।’

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে ছিল রোদ, এখন বৃষ্টি। ভোগান্তির অবস্থাটা বোঝেন। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। চারদিক স্থবির হয়ে আছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ডাইভারশন করে কিছু সড়ক সচল রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই অবরোধ না ওঠা পর্যন্ত সড়ক সচল করা কঠিন।’

৬ দফা দাবিতে সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ

ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টার পরে তারা তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তাসহ তেজগাঁও ও শিল্পাঞ্চল এলাকার সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধে দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি হলো-

১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন এবং মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।

৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমানের (১০ম গ্রেড) পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫. কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরাবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top