মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫, ২রা আষাঢ় ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


এক বছরে ৬ গুণ বেড়ে প্রভিশন ঘাটতি পৌনে ২ লাখ কোটি!


প্রকাশিত:
১৬ জুন ২০২৫ ১৯:২৩

আপডেট:
১৭ জুন ২০২৫ ০১:১১

ছবি সংগৃহীত

নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি বেড়ে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি
বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ৬৩ হাজার ৯৬৬ কোটি
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঘাটতি ১ লাখ ৭ হাজার ৩৪০ কোটি
উচ্চ খেলাপি ঋণে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত। আর এই খেলাপির কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রভিশন তথা নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতিও। ভালো এবং মন্দ ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রভিশন তথা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে। তবে ঋণ জালিয়াতি এবং অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ যে হারে বাড়ছে, একই হারে পরিচালন মুনাফা না বাড়ায় পর্যাপ্ত প্রভিশন রাখতে পারছে না সরকারি ও বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি ব্যাংক। এই তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু সবল ব্যাংকও।

যদিও প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংক দুর্বল হওয়ার সংকেত বহন করে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি না রাখার ফলে ২০২৫ সালের মার্চ মাস শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ছয় গুণেরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশনিং আলাদা করে রাখার বিধান রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের মোট প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ টাকা। এর আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতের প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। তারও আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এছাড়াও গত বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চে প্রভিশন ঘাটতি ছিল মাত্র ২৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। যা এক বছরের বেড়েছে ছয় গুণ বেশি।


তথ্য বলছে, মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৫৭ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। তারও আগে গতবছরের সেপ্টেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ২০৪ কোটি টাকা।

তথ্যানুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৪৮ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুরোর প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৫৮ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা বা দ্বিগুণেরও বেশি। তারও আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে যার পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা।

তবে বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রবিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪৩২ কোটি টাকাও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রবিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে ২৪৮ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে অর্থনীতি গবেষক ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো এম. হেলাল আহম্মেদ জনি ঢাকা মেইলকে বলেন, মন্দ ঋণের বিপরীতে যে প্রভিশন রাখতে হয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি যা খেলাপি ঋণের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। যদি কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারে তাহলে তাদের ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে দেওয়া কোনো অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। ব্যাংক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক মজবুতি অর্জন না হলে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসলে আবারও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য অবশ্যই ব্যাংকগুলোর আরও সতর্ক হতে হবে এবং রেগুলেটরি বডি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি জোরদার করতে হবে।

এদিকে ২০২৫ সালের মার্চ শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। যা তৎকালীন বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top