আতিফ আসলামের কনসার্ট ঘিরে ‘পরিকল্পিত প্রতারণা’র অভিযোগ কেন?
প্রকাশিত:
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৫
আপডেট:
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:১০
গত ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় পারফর্ম করার কথা ছিল জনপ্রিয় পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলামের। কিন্তু কনসার্টটি শেষ মুহূর্তে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি অনুমতি না মেলায় এই সিদ্ধান্ত এলেও আয়োজকদের কর্মকাণ্ডে উঠেছে ‘পরিকল্পিত প্রতারণা’র অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে শ্রোতা-ভক্তদের পাশাপাশি শিল্পীরাও এটাকে ‘পরিকল্পিত স্ক্যাম’ বলে ধারণা করছেন।
সদ্যই একটি পোস্টে জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস- এর হামিন আহমেদ এই আয়োজনের চরম অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আয়োজকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ ও পরামর্শ জানিয়ে হামিন আহমেদ লেখেন, ‘আগে সব অনুমোদিত অনুমতিগুলো হাতে নিন, তারপর কনসার্টের প্রচারণা করুন এবং টিকিট বিক্রি করুন— সিম্পল! মিথ্যা কথা বলা, বোকা অজুহাত আর সংগীতপ্রেমীদের ভোগান্তি বন্ধ করুন! আপনারা কনসার্টের পরিবেশটা নষ্ট করে দিচ্ছেন।’
সেই পোস্টের মন্তব্যঘরে এক নেটিজেন মন্তব্য করেন, এটি কোনো সাধারণ ‘দুর্ভাগ্য’ নয় বরং একটি পরিকল্পিত স্ক্যাম। এতে দর্শকদের টাকা ও স্পনসরদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামিন আহমেদ সেই মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে ফিরতি মন্তব্যে লেখেন, ‘একমত, এখানে স্ক্যাম জড়িত আছে।’
গত ১১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাতে আতিফ আসলাম নিজেই ভক্তদের উদ্দেশ্যে দুঃখ প্রকাশ করে কনসার্ট স্থগিতের খবর জানান। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো, আতিফ আসলামের ঘোষণার মাত্র এক ঘণ্টা আগেও আয়োজকরা ‘ফাইনাল ৪ আওয়ার্স লেফট’ বা ‘লাস্ট ৬০ মিনিটস’ এর মতো প্রচারণা চালিয়ে টিকিট বিক্রি অব্যাহত রেখেছিলেন। সরকারি কোনো অনুমতি ছাড়াই কেন টিকিট বিক্রি করা হলো, তা নিয়ে সংগীতাঙ্গন ও দর্শক মহলে তীব্র সমালোচনা চলছে।
কনসার্ট বাতিলের ঘোষণা আসার পর আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘মেইন স্টেজ ইনক’-এর ফেসবুক পোস্টগুলোতে টিকিট ক্রেতা এবং শ্রোতাদের তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। মন্তব্যের ঘরে অনেকেই দ্রুত তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ফৌজিয়া তাহসিন প্রীতি মন্তব্য করেন, ‘আয়োজকদের প্রথমে ‘বাতিল’ এবং ‘স্থগিত’ শব্দের পার্থক্য বোঝা উচিত।’ অন্যদিকে, আমাইরা রহমান, তানজিমা আক্তার সিলভি, এবং প্রিন্স ওয়াই-এর মতো ব্যবহারকারীরা আর কোনো অজুহাত না দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানান।এছাড়া জাকির উদ্দিন সরদার লিখেছেন, যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাকা ফেরত না পান, তাহলে তারা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে মামলা করবেন। অনেকে আবার এই বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, আয়োজকরা টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করে পালিয়ে যাবেন না তো।
এদিকে, টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘মেইন স্টেজ ইনক’ এবং এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা কাজী রাফসানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া। তার দাবি, আগামী ৭ দিনের মধ্যে টিকিট ক্রেতাদের অর্থ ফেরত এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা। অন্যথায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং সিআইডি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে আবার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘Main Stage Inc’-এর ফেসবুক পেজটি ভেরিফাইড নয় এবং এর নাম কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এমনকি কনসার্টের দুদিন আগেও কোনো ভেন্যু চূড়ান্ত ছিল না বলে ভেন্যু কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল। আয়োজকরা প্রথমে এটিকে চ্যারিটি কনসার্ট দাবি করলেও আতিফ আসলামের ঘোষণার পর তারা ‘জাতীয় নির্বাচন ও নিরাপত্তা’র অজুহাত দিয়ে অর্থ ফেরতের আশ্বাস দেয়। আয়োজকেরা উল্লেখ করে, টাকা ফেরতের অনুরোধগুলো দায়িত্বের সাথে নিষ্পত্তি করা হবে। কোনো যোগ্য টিকিটধারীর টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করা হবে না। সকল আপডেট শুধুমাত্র আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, আড়াই হাজার থেকে নয় হাজার টাকা দামের এসব টিকিট ‘চলঘুরি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছিল। যদিও আয়োজকরা দাবি করেছেন যে চলঘুরি শুধু টিকিট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে এবং তারা ইভেন্ট পরিকল্পনা বা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত নয়।
সম্পর্কিত বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: