শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫, ১২ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


১২টি নামি-দামি ক্লাবের সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর


প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০২১ ০৩:১২

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০৯

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীর নামি-দামি ১২টি ক্লাবের সদস্য ছিলেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব ক্লাবের সদস্য হন তিনি এবং নিয়মিত এসব ক্লাবে যাতায়াত করতেন।

শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রাজধানীর ১২টি নামি-দামি ক্লাবে যাতায়াত ছিল হেলেনা জাহাঙ্গীরের। এসব ক্লাবে তিনি নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে নিজের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, ফ্লিম ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত।

সাংবাদিক নিয়োগের নামে চাঁদাবাজি
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টেলিভিশনে কর্মী/সাংবাদিক নিয়োগের নামে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা করতেন। এ ধরনের একটি চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ফোনালাপ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

তিনি বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশন সিলগালা করা হয়েছে এবং অবৈধ মালামাল জব্দ করা হয়েছে। হেলেনা জয়যাত্রা টেলিভিশনে সাংবাদিক নিয়োগের নামে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা করতেন। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও দেশের বাইরেও প্রতিনিধি নিয়োগ দিতেন। চাঁদাবাজি সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসে অভিযানে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত নথিপত্রও জব্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের একজন জেলা প্রতিনিধি চাঁদাবাজি সংক্রান্ত অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে।

মাদার তেরেসা ও পল্লীমাতা খেতাবের প্রচারণা!
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অপকৌশলের মাধ্যমে মাদার তেরেসা, পল্লীমাতা ও প্রবাসীমাতা হিসেবে পরিচিতি পেতে চেয়েছিলেন উচ্চাভিলাষী হেলেনা জাহাঙ্গীর। এছাড়াও অস্ট্রিয়া প্রবাসী আলোচিত সেফুদার সঙ্গে যোগাযোগ এবং লেনদেনও ছিল তার।

তিনি বলেন, অপকৌশলের মাধ্যমে নিজেকে মাদার তেরেসা, পল্লীমাতা ও প্রবাসীমাতা হিসেবে পরিচিতি পেতে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন হেলেনা। তার পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র এসব ভুয়া খেতাবের অপপ্রচার চালাত। বিভিন্ন দেশি সংস্থা ও ব্যক্তি থেকে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে অর্থ সংগ্রহ করতেন। যা মানবিক সহায়তায় ব্যবহারের চেয়ে গ্রেফতারকৃতের খেতাব প্রচার-প্রচারণায় বেশি ব্যবহার করা হত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার হেলেনা জাহাঙ্গীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন। তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন। খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিব্রত করতেন। অনৈতিক পন্থায় সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে খ্যাতনামা হিসেবে উপস্থাপন করতে চতুরতার আশ্রয় গ্রহণ করতেন। নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফেসবুক লাইভে এসে অযাচিত ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করতেন।

তিনি বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এই অভিযান চালায়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, একটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, একটি হরিণের চামড়া, দু’টি মোবাইল ফোন, ১৯টি চেক বই ও বিদেশি মুদ্রা, দু’টি ওয়াকিটকি সেট এবং ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম ৪৫৬টি চিপস উদ্ধার করা হয়। পরে মধ্যরাতে তার জয়যাত্রা টেলিভিশন স্টেশনেও অভিযান পরিচালনা করা হয়।

জানা যায়, হেলেনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালে তারা বিয়ে করেন। দু’জনে মিলে জয়যাত্রা গ্রুপের নামে প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

হেলেনা পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর সদস্য। এছাড়াও তিনি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক।

জয়যাত্রা টিভি নামে একটি আইপি টিভির প্রতিষ্ঠাতা হেলেনা জাহাঙ্গীর। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, এ আইপি টিভিতে কাজ করতে হলে টাকা দিয়ে আইডি কার্ড নিতে হয়। এতে সংবাদ প্রচার করতে হলেও মাসে মাসে টাকা গুনতে হয় সাংবাদিকদের। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে হেলেনা কখনো কথা বলেননি।


সম্পর্কিত বিষয়:

হেলেনা জাহাঙ্গীর

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top