মঙ্গলবার, ৬ই মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যেভাবে উদ্ধার হলো দুই বোন


প্রকাশিত:
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:১৪

আপডেট:
৬ মে ২০২৫ ০২:০৮

ছবি সংগৃহিত

দক্ষিণ তুরস্কের আনতাকিয়ার একটি পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট। ভয়াবহ ভূমিকম্পে তা এখন ধ্বংসস্তূপ। এই ধ্বংসস্তূপ ঘিরে রয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। কিছুটা দূরে অপেক্ষা করছেন আরও অনেকে। সবার মাঝে এক উৎকণ্ঠা ও রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। যেন কিছু একটার জন্য উদগ্রীব তারা।

এসময় সেই ধ্বংসস্তূপের কাছে ‘মার্ভ! ইরেম! মার্ভ! ইরেম!’ বলে চিৎকার করে যাচ্ছেন মুস্তাফা ওজতুর্ক। তিনি একজন উদ্ধারকর্মী। কিন্তু তার চিৎকারে কাজ হচ্ছে না। মার্ভ, ইরেম এই দুই তরুণীর কেউ সাড়া দিচ্ছেন না। সবার মাঝে হতাশা নেমে এলো। অস্থির হয়ে পড়েছেন সবাই।

বিধ্বস্ত ভবনটির দূরে অবস্থান নেওয়া লোকদের মাঝে ওই দুই তরুণীর বন্ধুরাও ছিলেন। তারা সারারাত সেখানে বসেছিলেন। কাঁদছিলেন। ভবন থেকে বেঁচে যাওয়া অন্য মানুষরা বারবার বলছিলেন, দুই বোন এই ধ্বংসস্তূপের নিচেই চাপা পড়ে আছেন। আর তাই উদ্ধারকর্মীরা কোনোভাবেই হাল ছাড়তে চাইছিলেন না। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কারণ গত দুদিন ধরে ওই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন ২৪ বছর বয়সী মার্ভ এবং তার বোন ১৯ বছরের ইরেম। কিন্তু তাদের জন্য এই সময়টা ছিল কয়েক সপ্তাহ।

এদিকে উদ্ধারকর্মী মুস্তাফা বারবার চিৎকার করে ডাকছিলেন মার্ভ-ইরেমকে। এসময় হঠাৎ যেন কি হলো। মুস্তাফা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘ইরেম, প্রিয় ইরেম, আমি তোমার খুব কাছে, তুমি আমাকে শুনতে পাচ্ছো?’

দূরে যারা ছিলেন তারা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কিছু শুনতে পাচ্ছিলেন না। তবে মুস্তাফার অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছিল ভেতর থেকে কেউ সাড়া দিচ্ছে। এটা যেন এক স্বস্তির অনুভূতি।

‘তুমি খুবই দারুণ! দয়া করে শান্ত থাকো, আমার কথার জবাব দাও। প্রিয় মার্ভ, আমার প্রশ্নের উত্তর দাও’। চিৎকার করে এই কথাগুলোই বলছিলেন মুস্তাফা।

মুস্তাফা ভালো করেই জানেন, ওই মেয়েদের উদ্ধারে আরও অনেক সময় লাগবে। কিন্তু তাদের সাহস দিতে হবে। ওরা আশা হারিয়ে ফেললে আর বাঁচবে না। তাই তাদের সঙ্গে মজার মজার কথা বলতে লাগলেন মুস্তাফা। মার্ভ ও ইরেমও হাসাহাসি শুরু করলো।

মুস্তাফা বলছিল, ‘যদি ভেতরে ওরা জায়গা পেতো, তাহলে হয়তো নাচানাচি করতো।’

উদ্ধারকর্মীদের হিসাব অনুযায়ী, দুই বোনের কাছে পৌঁছাতে আরও দুই মিটার খুঁড়তে হবে। কিন্তু উদ্ধারকর্মী দলের অধিনায়ক হাসান বললেন, কংক্রিটের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটা ভুল পদক্ষেপে বিরাট বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। যখন খোঁড়া শুরু হলো, তখন একটা পুরো কংক্রিট তুলে ধরে রাখার জন্য বুলডোজার আনা হলো।

মুস্তাফা চিৎকার করে ওই মেয়েদের বলছিলেন, ‘ভয় পেয়ো না। বিশ্বাস করো, আমরা তোমাদের ফেলে চলে যাবো না। আমি তোমাদের বের করে আনবো। এরপর তোমরা দুজন আমাদের লাঞ্চ খাওয়াতে নিয়ে যাবে।’

মধ্যরাতে খনন কাজ চলছে। কেউ কয়েক রাত ঘুমায়নি। কংক্রিটের মধ্যে উদ্ধারকর্মীরা একটা ছোট্ট ছিদ্র করেছে, মেয়ে দুটি মুস্তাফার টর্চের আলো দেখতে পারছে কি না, সেটা জানার জন্য। তারা আলো দেখতে পাচ্ছে। তখন তাদের জন্য একটা নাইট ভিশন ক্যামেরা পাঠানো হলো।

ক্যামেরাটি ওপরে একটা ছোট্ট পর্দার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সবাই সেই পর্দায় দেখতে পেলো মার্ভ- ইরেমকে। এ যেন সবার জন্য এক আনন্দের মুহূর্ত। সবার মুখে এখন স্বস্তির ছায়া। কারণ মেয়ে দুটি ভালোই আছে। উদ্ধারকর্মীরা বললেন, ‘তোমরা কী সুন্দর। বেশি নড়াচড়া করো না।’

এদিকে মধ্যরাত পেরিয়ে তখন ভোর পাঁচটা। সুড়ঙ্গটি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে। তার ভেতর দিয়ে উদ্ধারকর্মীরা হামাগুড়ি দিয়ে যেতে পারবেন। সব কিছু প্রস্তুত করা হলো- মেডিকেল টিম, অ্যাম্বুলেন্স। সবাই যেন উত্তেজিত। এরপর সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। সকাল সাড়ে ৬টায় প্রথমে ইরেমকে বাইরে বের করে আনা হলো। ও কাঁদছিল। এ যেন বেচে ফেরার স্বস্তির কান্না। এর আধা ঘণ্টা পর মার্ভকেও বের করে আনা হলো।

মার্ভ বেরিয়ে আসার পর সবাই উল্লাস করছিল। হাততালি দিচ্ছিল। যে বন্ধুরা সারারাত জেগেছিল, তারা চিৎকার করে কাঁদছিল। আর বলছিল ‘মার্ভ, ইরেম, আমরা তোমাদের পাশে আছি। ভয় পেয়ো না।’

দুই বোনকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলো, নিয়ে যাওয়া হলো একটি ফিল্ড হাসপাতালে। এভাবেই বেচে ফিরলো দুটি প্রাণ। তবে মার্ভ-ইরেমের জন্য কষ্ট ভোলার এটাই যথেষ্ট ছিল না। কারণ ভূমিকম্পে তাদের সামনেই মারা গেছেন তাদের মা। যার মরদেহ সেই ধ্বংসস্তূপের নিচেই পড়ে রয়েছে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top