শুক্রবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


রাফায় ইসরায়েলি আক্রমণ থামাতে বাইডেনের চাপ, মিশরের হুমকি


প্রকাশিত:
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৬

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৩২

গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়ে রাফায় আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। ছবি: আল জাজিরা

বেসামরিক লোকজনকে নিরাপদ রাখার একটি ‘গ্রহণযোগ্য এবং কার্যকরী’ পরিকল্পনা ছাড়া ইসরায়েলের উচিত হবে না গাজার রাফায় অভিযান চালানো। রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে একথা বলেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রাফায় সম্ভাব্য ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে এখন পর্যন্ত এটিই ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সবচেয়ে বেশি শক্ত বক্তব্য। বাইডেন গত সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানকে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলে বর্ণনা করেন।

নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোন আলাপে বাইডেন মানবিক ত্রাণ সরবরাহ জোরদার করার জন্য ‘জরুরি এবং সুনির্দিষ্ট’ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল ১৩ জানায়, বাইডেন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনালাপ ৪৫ মিনিট ধরে চলে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, টেলিফোন আলোচনায় যুদ্ধ বিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আলাপই বেশি সময় নিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা কূটনৈতিক তৎপরতার পর, যুদ্ধে বিরতির বিনিময়ে হামাসের হাতে বন্দি বাকি জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি করার ‘কাঠামো এখন প্রায় দাঁড় করান হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বিস্তারিত কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। নেতানিয়াহুর অফিস এই টেলিফোন আলাপ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয় নি।

হামাসের আল আকসা টেলিভিশন কেন্দ্র অজ্ঞাত এক হামাস কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, রাফায় সেনা অভিযান চালানো হলে, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, মিশর এবং কাতারের মধ্যস্থতায় চলমান আলোচনা ভেস্তে যাবে।

শান্তি চুক্তি নিয়ে মিশরের হুমকি-
এর আগে মিশর হুমকি দেয় যে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী যদি গাজার সীমান্ত শহর রাফায় অভিযান চালায়, তাহলে তারা ইসরায়েলের সাথে তাদের শান্তি চুক্তি থেকে বের হয়ে আসবে। রোববার এ কথা বলেছেন দুজন মিশরীয় কর্মকর্তা এবং একজন পশ্চিমা কূটনীতিক। মিশর আশঙ্কা করছে, রাফায় যুদ্ধ শুরু হলে অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সরবরাহের প্রধান পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এই হুমকির আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে গত চার মাস ধরে চলা যুদ্ধে জিততে হলে রাফায় সেনাবাহিনী পাঠাতে হবে। তিনি বলেন, রাফায় এখনও হামাসের চারটি ব্যাটেলিয়ন আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিশর এবং ইসরায়েলের মধ্যেকার ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয়া হয়। এই চুক্তি প্রায় ৫০ বছর ধরে আঞ্চলিক স্থিতিশিলতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।

গাজার ২৩ লাখ মানুষের অর্ধেকের বেশি রাফায় আশ্রয় নিয়েছে। তারা ভূখণ্ডের অন্যান্য এলাকার যুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসে সীমান্তের কাছে তাঁবু আর জাতিসংঘ পরিচালিত আশ্রয় শিবিরে ঠাসাঠাসি করে থাকছে। মিশরের আশঙ্কা, লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর ঢল নামতে পারে যাদের আর গাজায় ফেরত যেতে দেওয়া হবে না।

নেতানিয়াহু ফক্স নিউজ সানডেকে বলেন, রাফার উত্তরে যাবার মত প্রচুর জায়গা আছে এবং ইসরায়েল সরে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের জায়গা মত চলে যাবার জন্য লিফলেট, সেল ফোন, নিরাপদ করিডোর এবং অন্যান্য জিনিস দেবে।

ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, রাফায় সেনা অভিযান চললে গাজার বাসিন্দাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে যেখানে ৮০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং জাতিসংঘের মতে, জনগোষ্ঠীর ২৫ শতাংশ অনাহারের সম্মুখীন। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল এবং মিশরের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

গাজার মানুষ কোথায় যাবে?
কাতার, সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশ হুশিয়ারি দিয়েছে যে ইসরায়েল রাফায় সেনা অভিযান চালালে তার গুরুতর পরিণতি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, রাফায় ইসরাইলি অভিযান অবর্ণনীয় মানবিক দুর্ভোগ এবং মিশরের সাথে ভয়ানক উত্তেজনা তৈরি করবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা একটি যুদ্ধাপরাধ এবং যেসব বেসামরিক বাসিন্দা সরে যাবে না, তারা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের আওতায় সুরক্ষার দাবিদার। হোয়াইট হাউজ যদিও ইসরায়েলে দ্রুত অস্ত্র পাঠিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক দাবির মুখে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে এখন তারা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাফায় স্থল অভিযান বেসামরিক মানুষের জন্য ভয়াবহ হবে।

ইসরায়েল এবং মিশর ৭০ এর দশকে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি করার আগে পাঁচবার যুদ্ধ করেছে। মিশর গাজার সাথে তাদের সীমান্ত শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, পাঁচ কিলোমিটার বাফার জোন তৈরি করেছে, মাটির ওপরে এবং নিচে কংক্রিটের দেয়াল তুলেছে। হামাস ওই সীমান্তে সুড়ঙ্গ দিয়ে অস্ত্র পাচার করে বলে ইসরায়েলের তোলা অভিযোগ মিশর নাকচ করে বলেছে, তাদের দিকে মিশরের বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে।

মিশরের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেন, যদি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ভেঙ্গে পড়ে, তাহলে সিনাই এলাকায় মানুষের ঢল ঠেকানো সম্ভব হবে না।

ইসরায়েল গাজার প্রায় সবাইকে দক্ষিণে সরে যেতে বললেও তারা নিয়মিতভাবে রাফাসহ সব জায়গায় বিমান হামলা চালাচ্ছে। সম্প্রতি রাফায় বিমান হামলায় নারী এবং শিশুসহ কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার বলেছে, গত ২৪ ঘন্টায় সেখানে নিহত ১১২ জনের মৃতদেহ এবং আহত ১৭৩ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে এ নাগাদ ২৮,১৭৬ জন গাজায় নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগ নারী এবং শিশু।

 


সম্পর্কিত বিষয়:

ইসরায়েল রাফা বাইডেন মিশর

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top