চীনের ওপর ট্রাম্পের ১০৪ শতাংশ শুল্কে বিশ্বজুড়ে ধাক্কা: এবার কী ঘটতে যাচ্ছে?
প্রকাশিত:
৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৭
আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৩৫

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্য সংঘাত নতুন এক মাত্রায় পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ঘোষণা দেন, মঙ্গলবার রাত ১২টা (স্থানীয় সময়) থেকে চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এটি হবে চীনের তথাকথিত ‘অন্যায্য বাণিজ্য নীতি ও আমেরিকার শোষণ’-এর বিরুদ্ধে এক কঠোর জবাব।
হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে, এই নতুন শুল্ক হার যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বঘোষিত ৩৪ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যোগ হয়ে কার্যকর হবে, যার অর্থ ২০২৫ সালে চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর মোট শুল্ক হবে ১০৪ শতাংশ।
ট্রাম্প বলেছেন, চীন যদি আরও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তবে তার জবাবে আরও বড় ধরনের শুল্ক বসানো হবে। আমরা আর চুপ থাকব না। আমেরিকা কোনোভাবেই শিকার হতে পারে না।
চীনের পাল্টা শুল্কের প্রতিক্রিয়া
চীন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে পূর্বের সতর্কবার্তার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ ধরনের ‘বেপরোয়া প্রতিশোধমূলক নীতি’ গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর জবাবে চীনের সঙ্গে সব ধরণের বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প আরও জানান, এখন থেকে আমেরিকা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ‘উত্তম চুক্তি’ করার দিকে মনোযোগ দেবে এবং প্রতিটি চুক্তি হবে আমেরিকান শ্রমিকদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে রেখে ‘টেইলার-মেড’।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
বাণিজ্য যুদ্ধে এমন চরম উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে কেউ জয়ী হয় না, বরং সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশগুলোর ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এটি একটি নেতিবাচক বার্তা। বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় মানুষগুলো এর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।’
হোয়াইট হাউজ জানাল, শুল্কে বিলম্ব নেই
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ১০৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে স্থানীয় সময় বুধবার ১২টা ১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৫টা ১ মিনিট)। কোনো ধরণের বিলম্ব বা সময় বাড়ানোর প্রশ্নই নেই বলে জানিয়ে দেন তিনি।
লেভিট আরও জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ৭০টি দেশ হোয়াইট হাউজের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রত্যেক দেশের জন্য আলাদা কৌশলে এগোবেন এবং চুক্তির ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে বিবেচিত হবে আমেরিকার স্বার্থ।
চীনের ব্যাপারে ট্রাম্পের অবস্থান যে কঠোর, তা বারবারই তুলে ধরেন লেভিট। তার ভাষায়, ‘‘চীন চায় আলোচনায় ফিরতে। তবে তারা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে মারাত্মক ভুল করেছে। প্রেসিডেন্ট যদি চান, তবে তিনি খুব উদার আচরণ করবেন, তবে সেটা আমেরিকার স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই।’’
বাণিজ্যের বাইরেও শুল্ক আলোচনার প্রভাব
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু বাণিজ্য নয়, বিদেশি সাহায্য ও বিদেশে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির মতো বিষয়গুলোও শুল্ক আলোচনার আওতায় আসতে পারে। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের কৌশল একটি বৃহৎ আন্তর্জাতিক সমীকরণের দিকে এগোচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এদিকে, প্রেসিডেন্টের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মধ্যে নতুন এই শুল্ক নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। নাভারো যেখানে আরও কঠোর শুল্কের পক্ষে, সেখানে মাস্ক সতর্ক করে বলেছেন, বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়লে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে হোয়াইট হাউজ এসব মতবিরোধকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। লেভিট হাস্যরস করে বলেন, ‘বয়েজ উইল বি বয়েজ।’
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন এক ধাপে প্রবেশ করল ১০৪ শতাংশ শুল্কের ঘোষণার মাধ্যমে। এখন দেখার বিষয়—এই শুল্ক কূটনৈতিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে কোন দিকে নিয়ে যায়, এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব কেমন পড়ে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: