শুক্রবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে পশ্চিমারা, বাস্তবে এটির কোনো প্রভাব থাকবে?


প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৩

আপডেট:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:০৩

ছবি সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ প্রায় ১০টি দেশ আগামী সোমবার ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগে তারা এ উদ্যোগ নিচ্ছে।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কী অবস্থা এখন

ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। এরমধ্যে বিশ্বের দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে এ স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত জানুয়ারিতে এ তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে মেক্সিকোর নাম।

ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনিকে তখনই স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেবে যখন ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে সম্মত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপের দেশগুলোর অবস্থানও এটি ছিল। তবে তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

তবে দ্বিরাষ্ট্র নিয়ে ২০১৪ সালের পর ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। আর সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, পৃথিবীতে ফিলিস্তিন নামে কোনো রাষ্ট্রই গঠন হতে দেবেন না তারা।

বর্তমানে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনের একটি প্রতিনিধি দল রয়েছে। যারা সেখানে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকেন। তাদের জাতিসংঘের কোনো কিছুতে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই।

ফিলিস্তিনকে বিশ্বের যত দেশই স্বীকৃতি দিক না কেন। তাদের জাতিসংঘের সদস্য হতে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এই পরিষদে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যারা ফিলিস্তিনের সদস্য পদের প্রক্রিয়া এক ভেটোর মাধ্যমেই শেষ করে দিতে পারবে।

বিশ্বজুড়ে এখন ফিলিস্তিনের যত কূটনৈতিক মিশন রয়েছে সেগুলো পরিচালনা করে ফিলিস্তিন অথরিটি (পিএ)। আন্তর্জাতিকভাবে পিএ-কে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

পিএ-এর নেতৃত্বে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তার ক্ষমতা রয়েছে ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিমতীরে। তাও সেখানে তার ক্ষমতা সীমিত। এছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করেই সেখানে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে তাকে। পিএ ফিলিস্তিনিদের পাসপোর্ট দেওয়া এবং ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতটি দেখে।

অপরদিকে গাজা উপত্যকা ২০০৭ সাল থেকে হামাসের নিয়ন্ত্রণে চলছিল। এরআগের বছর এক ছোট গৃহযুদ্ধের পর সেখান থেকে আব্বাসের ফাতাহ মুভমেন্টকে বিতাড়িত করে হামাস। তা সত্ত্বেও গাজার অনেক সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন দিয়ে থাকে পিএ।

দখলদার ইসরায়েল দাবি করে থাকে জেরুজালেম তাদের রাজধানী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য কোনো শক্তিধর দেশের দূতাবাস জেরুজালেমে নেই।

অপরদিকে পশ্চিমতীরের রামাল্লাহ অথবা পূর্ব জেরুজালেমে ৪০টি দেশের ফিলিস্তিনি কনস্যুলার অফিস রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যত স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজধানী হিসেবে দেখে। যারমধ্যে রয়েছে চীন, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, কানাডা, ডেনমার্ক, মিসর, জর্ডান, তিউনিশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।

কেন পশ্চিমারা স্বীকৃতি দিচ্ছে

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধের চাপ হিসেবে পশ্চিমা দেশগুলো প্রায় একসঙ্গে ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। সবার আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এ ঘোষণা দেন। এরপর অন্যান্য দেশগুলো তার দেখানো পথে আসে।

পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে বাস্তবে এর কোনো প্রভাব পড়বে?

অনেকেই ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে শুধুমাত্র একটি প্রতীকি বিষয় হিসেবে দেখেন। তারা যুক্তি দেন চীন, ভারত, রাশিয়া ও আরবের দেশগুলো অনেক আগেই ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিন বিষয়ক দ্বন্দ্বে দেশগুলো বড় কোনো প্রভাব রাখতে পারে না।

ফিলিস্তিনের যেহেতু জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ নেই তাই অন্য দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চালানোর ক্ষেত্রেও তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডেও বাইরের দেশগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কূটনীতিকদের পাঠাতে পারে না।

ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জন্য পণ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা বা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ সীমিত করে রেখেছে। ফিলিস্তিনিদের কোনো বিমানবন্দর নেই। স্থলবেষ্টিত পশ্চিম তীরে কেবল ইসরায়েল অথবা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা জর্ডান সীমান্ত দিয়ে পৌঁছানো যায়। একইভাবে, গাজা উপত্যকায় প্রবেশের সমস্ত পথ ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণ করে।

তবে, যে দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বলছে, এটি শুধু একটি প্রতীকী পদক্ষেপের চেয়েও বেশি কিছু।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত হুসাম জমলত বলেন, এই স্বীকৃতি সমতার ভিত্তিতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে অংশীদারত্বের জন্ম দিতে পারে।

জেরুজালেমে সাবেক ব্রিটিশ কনসাল-জেনারেল ভিনসেন্ট ফিন বলেন, এটি দেশগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করতে বাধ্য করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে এর ফলে ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বসতিগুলো থেকে আসা পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে, যদিও ইসরায়েলি অর্থনীতির ওপর এর ব্যবহারিক প্রভাব খুবই নগণ্য হবে।

সূত্র: রয়টার্স


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top