ইসরাইলের পরবর্তী টার্গেট কি তুরস্ক?
প্রকাশিত:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৫
আপডেট:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৪

ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, ইরান, ইয়েমেনে ধারাবাহিকভাবে হামলার পর সম্প্রতি কাতারে ইসরাইলের বিমান হামলার পর আঙ্কারায় উদ্বেগ বাড়ছে। তেলআবিবের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে এখন তুরস্কও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ উপসাগরীয় মিত্র কাতারে বিমান হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরাইলি বিশ্লেষকদের দৃষ্টি ঘুরে যায় তুরস্কের দিকে।
এ নিয়ে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল রুবিন বলেন, তুরস্ক হতে পারে দখলদার ইসরাইলের পরবর্তী লক্ষ্য। সেই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, ন্যাটো সদস্যপদও তুরস্ককে রক্ষা করতে পারবে না।
এদিকে ইসরাইলি অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেইর মাসরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, আজ কাতার, কাল তুরস্ক।
এর জবাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের একজন উপদেষ্টা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ইসরাইল যদি তুরস্কের ওপর হামলার চিন্তা করে, তাহলে দেশটির জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে।
বিগত কয়েক মাস ধরেই ইসরাইলি মিডিয়াগুলো তুরস্ককে ‘ইসরাইলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে চিত্রিত করে আসছে। বিশেষ করে, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের উপস্থিতি ও যুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়ায় দেশটির পুনর্গঠনে ভূমিকা—এ বিষয়গুলোকে ইসরাইলি বিশ্লেষকরা ‘নতুন হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।
এদিকে গাজায় চলমান হামলা এবং আঞ্চলিক আগ্রাসনের মধ্যেই তুরস্ক গত আগস্টে ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেয়।
আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট ফেলো ওমর ওজকিজিলসিক কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, আঙ্কারায় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইসরাইল আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারে বদ্ধপরিকর।
তিনি আরও বলেন, তুরস্ক বিশ্বাস করে, ইসরাইল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থন রয়েছে।
কাতারে হামলার পর তুরস্কের মধ্যে আরেকটি শঙ্কা জন্মেছে, তা হলো— ন্যাটো জোটের প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর? কারণ, কাতার ‘মেজর নন-ন্যাটো অ্যালাই’ হলেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
ওজকিজিলসিক বলেন, তুরস্ক বহু আগেই বুঝে গেছে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর ওপর নির্ভর করা যাবে না।
নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ও তুরস্কের উদ্বেগ
ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণাকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আগস্টে এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, অবশ্যই, আমি এ ধারণায় বিশ্বাস করি। এ মন্তব্য আঙ্কারায় কেবল প্রতীকী হিসেবেই বিবেচিত হয়নি, বরং এটিকে তুরস্কের আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আল জাজিরাকে বলেন, গ্রেটার ইসরাইলের লক্ষ্য হলো—এই অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর এবং বিভক্ত করে রাখা।
এই প্রেক্ষাপটে, ইসরাইল শুধু গাজা বা পশ্চিম তীরেই নয়—সিরিয়া, ইয়েমেন, এমনকি তিউনিসিয়ায় গাজায় পাঠানো সাহায্য বহরে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি, ইরানের ওপর সামরিক হামলায় প্রবলভাবে অংশ নিয়েছে।
আঞ্চলিক আধিপত্য: সংঘাতের মূল রূপরেখা
ইসরাইলকে আঞ্চলিক একচ্ছত্র শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে প্রবণতা, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে জুলাইয়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে তুরস্কের দূত ও সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম বারাক স্বীকার করেন—ইসরাইল একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সিরিয়া চায় না।
সিরিয়ার ওপর একাধিক হামলা, লেবাননের দক্ষিণে হিজবুল্লাহ নেতৃত্বে আঘাত এবং ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ—এ সবই ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইল আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের একে একে দুর্বল করতে চাইছে।
পরবর্তী সংঘর্ষের ক্ষেত্র: সিরিয়া?
সাবেক তুর্কি নৌ-অ্যাডমিরাল এবং ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ কৌশলের রূপকার সেম গুরদেনিজ বলেন, তুরস্ক ও ইসরাইলের প্রথম সংঘর্ষের ক্ষেত্র হতে পারে সিরিয়ার স্থল ও আকাশসীমা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ায় গ্রিস, গ্রিক সাইপ্রাস ও ইসরাইলের সমন্বয়ে সাইপ্রাসে যে সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটি শক্তিশালী হচ্ছে, তা তুরস্কের ব্লু হোমল্যান্ড নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণা, কাতারে ইসরাইলি হামলা, সিরিয়ায় আঞ্চলিক কর্তৃত্বের প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে আঙ্কারার চোখে এখন ইসরাইল একটি আগ্রাসী ও একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে পরিচালিত শক্তি।
অন্যদিকে তুরস্কও তার সামুদ্রিক ও আঞ্চলিক কৌশল নিয়ে এই আধিপত্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্র: আল জাজিরা।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: