সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


গোডাউন মালিক-ড্রাইভার-হেলপারের যোগসাজশে গার্মেন্টস পণ্য চুরি


প্রকাশিত:
২৯ জানুয়ারী ২০২৩ ২১:৪৯

আপডেট:
৩০ জানুয়ারী ২০২৩ ০৩:৪৫

ছবি সংগৃহিত

গোডাউন মালিক, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক বা গার্মেন্টস পণ্য বহনকারী যানবাহনের চালক ও হেলপারের যোগসাজশে গার্মেন্টস শিল্পের পণ্য চুরি হচ্ছে। কয়েকটি অভিযানের পর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানা এলাকা হতে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের গার্মেন্টস পণ্য জব্দ করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। এ ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোর চক্রের মূলহোতাসহ সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, গার্মেন্টস পণ্য চুরির ব্যাপারে একটি ধারণা পায় র‌্যাব। এক বা একাধিক মাস্টারমাইন্ড রয়েছে যারা গার্মেন্টসের পণ্যবাহী পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। পরে গার্মেন্টস পণ্য নির্বিঘ্নে চুরি করে।

গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়া হচ্ছিল। পথিমধ্যে কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করার সময় নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার ভাইভাই টিম্বার স’মিলের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-৪।

সেখান থেকে ৫ কোটি টাকা মূল্যের চোরাইকৃত প্রায় ২৬ হাজার ৯৯৫ পিস গার্মেন্টস পণ্যসহ একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। এসময় সংঘবদ্ধ চক্রটির মূলহোতাসহ সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন—রিপন ওরফে ছোট রিপন (৪৩), বিল্লাল হোসেন ওরফে ছোট বিল্লাল (৩৬), নাঈম ইসলাম (২৭), মো, আকাশ (২৬), মো. সুমন (৩০), মো. ফরিদ (৩৮) ও মঞ্জুর হোসেন জিকু (৩৮)।

লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, টাকার লোভে চালক ও হেলপারেরা গার্মেন্টস পণ্য গোপনে সরিয়ে ফেলতে চোর চক্রের প্রস্তাবে রাজি হয় ও সহায়তা করে। বন্দরে প্রদর্শনের জন্য গার্মেন্টেসের পক্ষ থেকে পণ্যের স্যাম্পল চালকের কাছে দেওয়া হয়ে থাকে। এ স্যাম্পল পাওয়ার পরপরই চালক সুযোগ বুঝে ছবি তুলে মূলহোতার কাছে পাঠায়। পণ্যের বাজার মূল্যের বিবেচনায় অধিক লাভজনক হলে মূলহোতা চালক ও হেলপারের সঙ্গে পরবর্তী চুক্তিতে যায়।

মূলহোতা আগে থেকেই অসাধু গোডাউন মালিকের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে থাকে। এরপর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী নির্জন জায়গা থেকে ড্রাইভার ও হেলপারের মাধ্যমে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানটি সেই গোডাউনে নিয়ে যায়।

গোডাউনে কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের আগেই কার্টন প্যাকেজিং ও লোড-আনলোডের কাজে কয়েকজন সহযোগী সেখানে অবস্থান করে। তারা দেড়-দুই ঘণ্টার মধ্যে কার্টনের মালামাল সরিয়ে ফেলে। এরপর ৩০ থেকে-৪০ শতাংশ মালামাল রেখে প্রত্যেক কার্টনে সমপরিমাণ ঝুট কাপড় রেখে সঠিকভাবে প্যাকেজিং করে কাভার্ড ভ্যানে লোড করে দেয়।

র‌্যাব-৪ অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গত ২৬ জানুয়ারি বিকেল নাগাদ ফ্যাক্টরি থেকে পণ্য কাভার্ড ভ্যানে লোড করে তেজগাঁও এ যায়। পরে কাভার্ড ভ্যানে জ্বালানি তেল ভরে পাম্পে গাইডের জন্য কিছুক্ষণ অবস্থান করে। গাইড নাঈম এসে মূলহোতা রিপনের নির্দেশ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার লাঙ্গলবন্দস্থ ভাইভাই টিম্বার স’মিলের উদ্দেশে রওনা করে।

সেখানে পৌঁছানোর পরে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল বিল্লাল হোসেন, ফরিদ ও মঞ্জুরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন। তারা বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ড ভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু গ্যানিং মেশিনের মাধ্যমে কেটে প্রত্যেক কার্টন গোডাউনের ভেতর নামায়।

কার্টন থেকে মালামাল চুরির সময় র‌্যাব-৪ এর দল ২৭ জানুয়ারি ভোরে কাভার্ড ভ্যানটির ড্রাইভার, হেল্পার, ‘স’ মিল মালিক, লেবার সর্দারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড রিপন ও বিল্লাল কিছু সময়ের মধ্যে চোরাই করা গার্মেন্টস পণ্যগুলো বুঝে নিতে আসলে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

চুরির ঘটনা রোধে ২০২১ এর মাঝামাঝি সময়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এর একটি যৌথ প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট গার্মেন্টস পণ্য চুরি রোধে কার্যক্রম শুরু করে।

র‌্যাব-৪ ২০২১ সালের আগস্ট থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজীপুর, আশুলিয়া, মিরপুর, আমিনবাজার, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ ও ডেমরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের মূলহোতাসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। এসব অভিযানে প্রায় ৩০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের গার্মেন্টস পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top