মঙ্গলবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৫, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’, ‘ডি’-এর ঘাটতি

বিপদ বাড়াচ্ছে খোলা তেল, ভিটামিন সমৃদ্ধ প্যাকেজিংয়ের তাগিদ


প্রকাশিত:
২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৩

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৩৭

ছবি সংগৃহীত

খোলার তেলের বাজারজাতকরণ দেশের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে, বিশেষ করে ভিটামিনসমৃদ্ধ তেল না পাওয়ার কারণে। যদিও ২০১৩ সালে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণের আইন করা হয়েছে, বাস্তবে খোলা তেলে প্রায় ৬৫ শতাংশের মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ নেই বা অপ্রতুল পরিমাণে রয়েছে। এদিকে খোলার তেল ব্যবহার শর্তসাপেক্ষে বন্ধ করতে শিল্প মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে কোনো কাজে আসছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের গুণগত মান এবং সঠিক প্যাকেজিং নিশ্চিত না হলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রাপ্য পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে "সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল : অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়" শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

তারা জানান, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’-এর ঘাটতির কারণে দেশের শিশুদের মধ্যে অন্ধত্ব, হাড় ক্ষয় এবং হৃদরোগের মতো শারীরিক সমস্যা বাড়ছে। তারা বলেন, এই সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ সমৃদ্ধ তেল বাজারে আনতে হবে, এবং ড্রামের খোলা তেলের বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে।

ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’-এর ঘাটতি :

কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্‌-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতিতে ভুগছে। এই ভিটামিনগুলোর ঘাটতি শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা তৈরি করে না, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব অন্ধত্ব এবং গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যু বাড়ায়, আর ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস, হাড় ক্ষয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

খোলার তেলের বিপদ-

কর্মশালায় জানানো হয়, বাজারে পাওয়া ৬৫ শতাংশ খোলা তেল, যেগুলো ড্রামে বিক্রি হয়, সেগুলোর ৫৯ শতাংশে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই এবং ৩৪ শতাংশ তেলে প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। মাত্র ৭ শতাংশ তেলে যথাযথ পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে, যা আইন মেনে বাজারজাতকরণের শর্তসাপেক্ষে হতে পারে। এছাড়াও খোলার তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই নন-ফুড গ্রেড উপকরণে ড্রাম ব্যবহার করে, যেগুলো মূলত কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হতো। এ ধরনের ড্রামে ভোজ্যতেল সংরক্ষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কা থাকে।

খোলা তেল বিক্রি বন্ধের সুপারিশ

কর্মশালায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) উপপরিচালক (সিএম) এস এম আবু সাঈদ বলেন, “খোলার তেল বিক্রি বন্ধ করা প্রয়োজন। আমাদের আইন অনুযায়ী, তেল যদি ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ না হয়, তবে তা বাজারে বিক্রি করা উচিত নয়। অথচ বাস্তবতায়, খোলার তেল থেকে সাধারণ মানুষ এই আইনটির সুফল পাচ্ছে না।”

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী আরও বলেন, “তেলের প্যাকেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক প্যাকেজিং ছাড়া তেল তার পুষ্টিগুণ হারাতে পারে। সূর্যরশ্মি এবং আলো তেলে থাকা ভিটামিন ‘এ’ ধ্বংস করে দেয়। এজন্য আমাদের বোতলগুলোকে অবশ্যই আলো প্রতিরোধী উপাদান দিয়ে তৈরি করতে হবে।”

সামগ্রিক উদ্যোগ প্রয়োজন

কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দেওয়া হলেও, বাস্তবে এর কার্যকর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বক্তারা জানান, ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ তেল বাজারে আসতে হলে, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

প্যাকেজিং ও ভিটামিন সমৃদ্ধ তেলের গুরুত্ব

সাংবাদিক কর্মশালায় আলোচনার শেষে, বিশেষজ্ঞরা জানালেন যে, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ সমৃদ্ধ তেল একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে, যা সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের প্রতিদিনের খাবারে পেতে পারে। তবে, এই তেলের সঠিক প্যাকেজিং এবং বাজারজাতকরণ অত্যন্ত জরুরি। আলো প্রতিরোধী বোতল ব্যবহার করা হলে তেলের পুষ্টিগুণ ঠিক থাকবে এবং ভিটামিন ‘এ’-এর কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী হবে।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, এবং বাংলাদেশ ফার্স্ট পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোর্শেদ নোমান। এছাড়াও, প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি অ্যাডভোকেসি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল কর্মশালায় উপস্থাপনা করেন।

 


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top