অর্ধেক টাকায় বন্যার্তদের ঘর বানানোয় সেনাবাহিনীর প্রশংসায় ড. ইউনূস
প্রকাশিত:
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:০৯
আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:২৪

গত বছরের আগস্টে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেকেরও কম খরচে ঘর নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এমন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এসব ঘরের চাবি বিতরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০টি পরিবারের সদস্যদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০টি পরিবারের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর নির্মাণের ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৩ ডিভিশনের কর্মকর্তারা মাত্র ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩০০টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এসব ঘরের মধ্যে ফেনী জেলায় ১১০টি, নোয়াখালী জেলায় ৯০টি, কুমিল্লা জেলায় ৭০টি ও চট্টগ্রাম জেলায় ৩০টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়।
বরাদ্দের অর্ধেক টাকা কাজ শেষ করার জন্য সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, আমরা যেই টাকা দিয়েছিলাম, তার অর্ধেক টাকা খরচ হয়েছে। এটা বলতে গেলে উল্টো খবর। সাধারণত বরাদ্দের দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ আবার চাওয়া হয়। এই অর্ধেক টাকাতে ৩০০ ঘর তৈরি হয়েছে। এটাও একটা আনন্দের খবর। সেনাবাহিনীর যারা কাজে নিয়োজিত ছিলেন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই কাজ ছিল না, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই গৃহ নির্মাণ কাজ ছিল। ঘর নির্মাণে অনেক জিনিসপত্র একত্রিত করতে হয়। এটা কঠিন ছিল, রাস্তা ঘাট বন্ধ ছিল। এর মধ্যেই কাজটি করতে হয়েছে। সুন্দর বাড়ি হয়েছে। আমরা সবার পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। যে সব পরিবারের বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থাৎ যাদের ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নেই এ রকম ৩০০টি পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনঃনির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রধানের পেশা, আয়, ঘর নির্মাণে আর্থিক অসামর্থ্য, দুঃস্থতা, ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধরন ও স্থানীয় অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে উপকারভোগী পরিবার বাছাই করা হয়।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য এক বা একাধিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যৌথ জরিপের মাধ্যমে উপকারভোগীদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করা হয়।
ঘরগুলো যেন দুর্যোগ সহনীয় ও টেকসই হয় সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সহযোগিতায় দুটি ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটি ডিজাইনে ২টি মূল কক্ষসহ কমন স্পেস, টয়লেট, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। প্রথম ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৪৯২ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ ৭ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং দ্বিতীয় ডিজাইনের ঘরের আয়তন ৫০০ বর্গফুট এবং প্রাক্কলিত টাকার পরিমাণ ৭ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা। উপকারভোগীদের নিজ বসতভিটার স্থানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো একজন উপকারভোগীর জন্য যেখানে যে ডিজাইন প্রযোজ্য হবে সেভাবেই গৃহগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
বন্যার ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিলো এই বন্যা। তখন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে, এটা স্বাভাবিক বন্যা না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গার বন্যা। এটা কত গভীরভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, সেটারও কোনো ধারণা ছিল না।
তিনি বলেন, প্রথমে আন্দাজ করা হচ্ছিল, তাড়াতাড়ি চলে যাবে। যতই দিন যাচ্ছিল, বন্যা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। প্রথমে সবাই জীবন রক্ষায় ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। সারা দেশে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সাহায্যের জন্য। এটা যে কত বড় বন্যা ছিল, সেটা বুঝতে পেরেছি চলে যাওয়ার অনেক পরে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যাদের একেবারেই ঘর নেই, তাদের জন্য প্রস্তাব আসছিল টাকা দেওয়ার। টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আমি একটু শক্ত অবস্থানে ছিলাম। এই টাকা দিতে গেলে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যাবে। আসলে যারা প্রাপ্য তাদের হাতে পৌঁছাবে কিনা। তখন একটা প্রস্তাব আসছিল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে করা। এই প্রকল্পের নাম শুনেছি, কিন্তু পরিষ্কার ধারণা ছিল না। ভাবছিলাম— কী করা যায়! পরে জানলাম এটা সেনাবাহিনী করবে। তখন একটু স্বস্তি পেলাম যে, এই টাকাটা অন্তত সঠিকভাবে ব্যবহার হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যেই টাকা দিয়েছিলাম, তার অর্ধেক টাকা খরচ হয়েছে। এটা বলতে গেলে উল্টো খবর। সাধারণত বরাদ্দের দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ আবার চাওয়া হয়। এই অর্ধেক টাকাতে ৩০০ ঘর তৈরি হয়েছে। এটাও একটা আনন্দের খবর।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: