সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫, ৩রা ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ইউরোপে ঘুরতে গিয়ে ‘অবাধ্য’ হলেই গুণতে হবে জরিমানা


প্রকাশিত:
১৮ আগস্ট ২০২৫ ১৫:৩৩

আপডেট:
১৮ আগস্ট ২০২৫ ১৭:৫৩

ছবি ‍সংগৃহিত

খালি পায়ে হাঁটলে যেমন জরিমানা হতে পারে কোনো জায়গায়, আবার স্যান্ডেল পরে গাড়ি চালানোর জন্য অর্থদণ্ড হতে পারে অন্য এলাকায়। কোথাও বা পোশাক ঠিক না রাখলে হবে ‘দণ্ড’, আবার কোথাও সাঁতার কাটাই ‘অপরাধ’।

ইউরোপ ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে থাকলে এই বিষয়গুলো আপনার জানা থাকাই হয়তো ভালো। এই বছর বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ‘খারাপ আচরণকারী’ পর্যটকদের জন্য মোটা অঙ্কের জরিমানা চালু করেছে।

কিন্তু এখনই কেন এটা করা হলো? এতে কি ছুটি কাটাতে আসা মানুষের আচরণ আসলেই পাল্টাবে?

দৃশ্যটি কল্পনা করুন– আপনার বিমানটি তুরস্কের সাগরপাড়ের পর্যটন আকর্ষণ আন্তালিয়ায় অবতরণ করেছে এবং আপনি বিমান থেকে নামার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে সিটবেল্ট খুলে ফেললেন এবং মাথার ওপরের লকার থেকে আপনার ব্যাগটি ধরলেন।

ঠিক তখনই হয়তো বিমানের একজন কর্মী আপনাকে ধরে একপাশে নিয়ে গেল এবং আপনাকে দ্রুত ৬২ ইউরো বা ৫৪ পাউন্ড দিতে হবে বলে জরিমানা করল। কারণ হলো– আপনি একটি নতুন নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন।

এই বছর থেকে, বিমানটি চলা পুরোপুরি বন্ধ না হলে সিটবেল্ট খুলে ফেলা বা আসন ছেড়ে উঠে যাওয়াকে একটি ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং এর জন্য জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এভাবেই ‘শাস্তি’ মাথায় নিয়ে হয়তো শুরু হতে পারে আপনার ছুটির ‘আনন্দভ্রমণ’।

এবারের গ্রীষ্মে ইউরোপের অনেক দেশই ছুটি কাটাতে আসা ‘অবাধ্য’ পর্যটকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। গাড়ি চালানোর সময় চপ্পল পরা থেকে শুরু করে সৈকতে ধূমপান পর্যন্ত, মহাদেশজুড়ে পর্যটকদের জরিমানার এক নতুন ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।

পর্তুগালের জনপ্রিয় সমুদ্র তীরবর্তী শহর আলবুফেইরাতে সৈকতের বাইরে সাঁতারের পোশাক পরলে আপনার যেমন দেড় হাজার ইউরো পর্যন্ত খরচ হয়ে যেতে পারে, আবার স্পেনের বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জে অথবা ম্যালোর্কা বা ইবিজা দ্বীপে জনসমক্ষে মদ্যপান করলে তিন হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

এমনকি ছোটখাটো লঙ্ঘন, যেমন রোদ পোহানোর জন্য কোনো সানবেড ভাড়া করে অনেক বেশি সময় তা ধরে রাখলে, অথবা যাওয়ার সময় তোয়ালেটা সেখানে ফেলে গেলে সেটাও ‘দণ্ডনীয়’ হতে পারে।

আবার হয়তো ঘুরতে ঘুরতে ‘নিরুদ্দেশ’ হয়ে যাওয়াটাও আপনার ছুটির বাজেটে ধাক্কা দিতে পারে।

এসব শুনে মনে হতেই পারে যে, এসব ব্যবস্থার মানে হলো যাদের হাত ধরে পয়সা আসছে সেই পর্যটকদের হাতেই কামড় বসানোর মতো বিষয় কি না। যেখানে ইউরোপের অনেক দেশই পর্যটন খাত থেকেই বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে।

তবে কর্তৃপক্ষগুলো যুক্তি দিয়ে বলছে, নিয়মগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দেওয়ার এবং ছুটি কাটাতে আসা মানুষদের ‘দায়িত্বশীল’ আচরণ করতে উৎসাহিত করবে।

লন্ডনে স্প্যানিশ পর্যটন অফিসের প্রেস বিভাগের প্রধান জেসিকা হার্ভে টেলর বলছেন, “নিয়মগুলো তালিকাভুক্ত করার সময় কঠোর এবং শাস্তিমূলক শোনালেও দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল ভ্রমণকে উৎসাহিত করার জন্য করা হয়েছে। ছুটির দিনে দায়িত্বশীল আচরণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অভিজ্ঞতা ভালো রাখার জন্যই এগুলো তৈরি করা হয়েছে।”

স্পেনের মালাগায় পর্যটকদের জন্য ১০ দফা আচরণবিধি- যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইমপ্রুভ ইয়োর স্টে’, সেটা বাসে, বিলবোর্ডে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। শহরে কেমন আচরণ করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে এখানে।

এর মধ্যে রয়েছে সম্মানজনক পোশাক পরা, যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলা, অতিরিক্ত শব্দ না করা এবং বেপরোয়া ই-স্কুটার ব্যবহার না করা। যারা এই নীতি মেনে চলবে না তাদের সর্বোচ্চ ৭৫০ ইউরো (৬৫০ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।

এই বছর পর্তুগালের আলবুফেইরাতেও পাবলিক প্লেসে একই ধরনের আচরণবিধি চালু করা হয়েছে, যেখানে প্রকাশ্যে নগ্নতা থেকে শুরু করে জনসমক্ষে প্রস্রাব করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, আবার শপিং কার্ট (শপিং মলে কেনাকাটার সময় চাকা লাগানো যে ঝুড়ি ব্যবহার করা হয়) সেগুলো যেখানে সেখানে ফেলে যাওয়াও ‘অবৈধ’ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, নিয়মগুলো শুধু দেখানোর জন্যই চালু করা হয়নি, বরং শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় পুলিশের গতিবিধি দেখা যাচ্ছে এবং তারা ‘অবাধ্য’ পর্যটকদের পাকড়াও করছে।

পরিবেশগতভাবে নাজুক এলাকা বা সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকায়- যেমন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ বা ল্যাপল্যান্ডের সামি গোষ্ঠীপ্রধান এলাকায় আগে থেকেই কিছু আচরণবিধি মেনে চলতে হয়। তবে এখন মূলধারার সৈকত বা রিসোর্টগুলোতেও নিয়মকানুন চালু একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

এর মানে হলো পর্যটকদের অনেকের আচরণই এখন খারাপ হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ শহরগুলো ও সেগুলোর বাসিন্দাদের পর্যটনের খারাপ দিকগুলো থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে।

“আমাদের দুটি প্রধান ধারণা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে; একটি হলো পরিবেশ সুরক্ষা এবং অন্যটি হলো সংরক্ষণ; সঙ্গে পর্যটন আমাদের সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করাও লক্ষ্য,” এই বছরের শুরুতে এক বক্তৃতায় এই কথা বলছিলেন ম্যালোর্কার ক্যালভিয়া শহরের মেয়র হুয়ান আন্তোনিও আমেঙ্গুয়াল।

“পর্যটন কখনোই স্থানীয় নাগরিকদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে না,” বলেন তিনি।

কোথায়, কীভাবে, কত টাকা জরিমানা

এই গ্রীষ্মে ইউরোপে কোথায়, কীভাবে, কত টাকা জরিমানা হতে পারে তার একটি ধারণা দেওয়া যেতে পারে–

ফ্লিপ ফ্লপ বা সহজ ভাষায় যাকে বলা হয় চপ্পল সেটা বা স্যান্ডেল পরে অথবা খালি পায়ে গাড়ি চালানোর জন্য স্পেন, গ্রীস, ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগালে ৩০০ ইউরো (২৬১ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এটা এড়াতে হলে গাড়ি চালানোর সময় সঠিক জুতা পরতে হবে।

সমুদ্রসৈকত থেকে দূরে সাঁতারের পোশাক পরার জন্য স্পেনের বার্সেলোনা, পর্তুগালের আলবুফেইরা, ক্রোয়েশিয়ার স্প্লিট, ইতালির সোরেন্টো ও ভেনিস, ফ্রান্সের কানে এক হাজার ৫০০ ইউরো (এক হাজার ৩০৭ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এই জরিমানা থেকে বাঁচতে হলে সমুদ্রসৈকত থেকে বের হওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে।

জনসমক্ষে মদ্যপানের জন্য স্পেনের ম্যালোর্কা, ইবিজা, ম্যাগালুফ দ্বীপ ও ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে তিন হাজার ইউরো (দুই হাজার ৬১৫ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এই দণ্ড থেকে বাঁচার জন্য বার, রেস্তোরাঁয় অথবা ভিলা বা অ্যাপার্টমেন্টে পরিমিত পরিমাণে পান করতে হবে।

সমুদ্রসৈকত থেকে খোলস বা নুড়ি তোলার জন্য গ্রীসে এক হাজার ইউরো (৮৭১ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। জরিমানা এড়ানোর জন্য নুড়ি না তুলে ছবি তুলতে হবে। এছাড়া খালে সাঁতার কাটার জন্য ভেনিসে ৩৫০ ইউরো (৩০৫ পাউন্ড) জরিমানা হতে পারে।

মনে রাখার মতো বিষয় হলো– জরিমানা হতে পারে এমন কাজের তালিকা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আয়ারল্যান্ডের এয়ারলাইন্স রায়ানএয়ার ‘বিঘ্ন’ সৃষ্টিকারী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০০ ইউরো বা ৪৩৫ পাউন্ড আদায় করে নিতে পারে।

অনুপযুক্ত জুতা পরে ইতালির উপকূলীয় পর্যটনকেন্দ্র সিনকে তেরতের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করলে পর্যটকদের আড়াই হাজার ইউরো (দুই হাজার ১৮০ পাউন্ড) পর্যন্ত জরিমানার শিকার হতে পারে। আর ধূমপান করতে গিয়ে সৈকত বা খেলার মাঠে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ফ্রান্স ঘটনাস্থলেই ৯০ ইউরো (৭৮ পাউন্ড) জরিমানা চালু করেছে।

ইউরোপে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পর্যটন বা অতিমাত্রায় পর্যটনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বেড়েছে।

স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্বল্পমেয়াদী বিভিন্ন ব্যবস্থা বা আইন যেমন নেওয়া হয়েছে, আবার নতুন নতুন জরিমানা আরোপও তাদের পক্ষে যাচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো স্বীকার করছে যে তাদের বাসিন্দাদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং এটি করার জন্য পর্যটকদের বিরক্তির ঝুঁকিও তারা নিচ্ছে। বিবিসি বাংলা


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top