মঙ্গলবার, ১৭ই জুন ২০২৫, ৩রা আষাঢ় ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ

প্রদীপকে গ্রেপ্তার দেখালেন আদালত


প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:০৭

আপডেট:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:৩৪

ফাইল ছবি

‘ঘুষ ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
ওই মামলায় প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণও আসামি রয়েছেন। প্রদীপ কারাগারে যাওয়ার পর থেকে চুমকি পলাতক।

গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রদীপসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অসুস্থতার কথা বলে থানা থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসেন প্রদীপ। চট্টগ্রামে থাকেন আত্মগোপনে। সেখান থেকে ৬ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে কারাগারে আছেন। পরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে প্রদীপ, তাঁর স্ত্রী, কক্সবাজারের পুলিশ সুপারসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়।

গত ২৩ আগস্ট দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) একজন নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগদান করেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তাঁর সম্পদগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। নানা কারণে হতে থাকেন আলোচিত। দুদক সূত্র জানায়, নগরের পাথরঘাটা এলাকায় চুমকি কারণ তাঁর বাবার কাছ থেকে একটি ছয়তলা বাড়ি দানপত্রমূলে পেয়েছেন বলে সম্পদ বিবরণীতে জমা দেন। কিন্তু চুমকির দুই ভাই ও আরেক বোন বাবার কাছ থেকে কোনো বাড়ি পাননি। এতে বোঝা যায়, প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই বাড়ি করেছেন। কাগজপত্রে তাঁর শ্বশুরের নাম রাখেন। পরে শ্বশুরের কাছ থেকে দানপত্রমূলে নিবন্ধন করে নেন ২০১৩ সালে। ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই তাঁর গৃহিণী স্ত্রী চুমকি কারণের নামে। এর কোনো বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎসই নেই। চুমকি কারণের নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

চুমকি কারণের আগের সঞ্চয়, উপহার, বাড়িভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। বৈধ আয় বাদ দিলে চুমকির নামে মোট ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটা তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ ক্রয় করে স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে দুদক অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে।

এখন মামলাটি তদন্ত করছে দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন। প্রদীপ কারাগারে যাওয়ার পর তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন ২৭ আগস্ট। আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রাখেন। এ জন্য গত শনিবার প্রদীপকে কক্সবাজার কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়।

একজন গৃহিণীর পক্ষে এত টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো ব্যবসাও নেই তাঁর। ঘুষ-দুনীতির মাধ্যমে প্রদীপের অর্জিত টাকায় এসব সম্পত্তি কেনা।

শুনানির জন্য কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রদীপকে আজ চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুলিশি পাহারায় প্রদীপ হাজির হন। ওই সময় তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে অসুস্থ দাবি করে জামিনের আবেদন করেন।

দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার হোসেন লাভলু আদালতকে বলেন, একজন গৃহিণীর পক্ষে এত টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া দৃশ্যমান কোনো ব্যবসাও নেই তাঁর। ঘুষ-দুনীতির মাধ্যমে প্রদীপের অর্জিত টাকায় এসব সম্পত্তি কেনা।

শুনানি শেষে আদালত প্রদীপকে দুনীতির এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। পরে নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রদীপকে আদালত থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রদীপকে দেখার জন্য আদালতে বিচারপ্রার্থীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। প্রদীপের অকর্ম নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা গেছে।


সম্পর্কিত বিষয়:

চট্টগ্রাম

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top