শুক্রবার, ১৫ই আগস্ট ২০২৫, ৩১শে শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


পরিবারের অভিযোগ

ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় আটকে মুক্তিপণ দাবি


প্রকাশিত:
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৫

আপডেট:
১৫ আগস্ট ২০২৫ ১৭:১৮

ছবি : মামুন রশীদ

ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন ও মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এরপর আবার মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে মধ্যস্থতাকারী মোজাম্মেল হোসেন এবং ঢাকা হাওলাদার ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে।

একই সঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার অসহযোগিতাসহ আসামিদের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা।

রোববার (১৬ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ক্রাব মিলনায়তনে ‘মানবপাচার মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশের গড়িমসি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা জানান ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা।

ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ভুক্তভোগী মাসুম মোল্যার ভাই আশরাফুল মোল্যা বলেন, আসামি দালাল মো. মোজাম্মেল হোসেনের শ্বশুরবাড়ি আমার পার্শ্ববর্তী উপজেলায় হওয়ায় তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। গত ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর আসামি মো. মোজাম্মেল হোসেন আমার বড় ভাইকে ইতালিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। বৈধভাবে ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে ‘ঢাকা হাওলাদার ট্রাভেলস’ অফিসের মাধ্যমে ইতালিতে লোক পাঠায় বলে জানান তিনি। তখন তার প্রস্তাবে আমি রাজি হই এবং ১১ ডিসেম্বর দালাল চক্রের অন্য সদস্যদের নিয়ে গুলশান অফিসে আসার পর আমার বড় ভাই মাছুম মোল্যাকে ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালিতে পাঠানোর জন্য মৌখিকভাবে চূড়ান্ত চুক্তি হয়।

তিনি আরও বলেন, একই দিন পাসপোর্টের সঙ্গে নগদ ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাড়িতে চলে আসি। পরে আসামি মো. মোজাম্মেল হোসেন আমাকে ফোন করে বলেন, আপনার বড় ভাইয়ের ফ্লাইট জানুয়ারির ২৮ (২০২৪ সালের) এবং আমাকে বলে বাকি ১৫ লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে অফিসে আসবেন। পরে গত জানুয়ারির ২১ তারিখে আসামি মোজাম্মেল আমাকে ব্যাংক হিসাব নম্বর দেন এবং ১ লাখ টাকা পাঠানোর জন্য বলেন। পরে আমি ওই দিনই ১ লাখ টাকা পাঠিয়ে দিই। এরপর ২৬ তারিখে বাকি ১৪ লাখ টাকা জোগাড় করে ঢাকার অফিসে এসে অন্য সব আসামিদের সামনে নগদ ১৪ লাখ টাকা মোজাম্মেল হোসেনের হাতে বুঝিয়ে দেই। সে সময় মোজাম্মেল হোসেন ২৮ তারিখ সকাল ৯টার মধ্যে আমার বড় ভাইকে অফিসে নিয়ে যেতে বলেন। সন্ধ্যায় আমার বড় ভাইয়ের ইতালির উদ্দেশ্যে ফ্লাইট বলে জানান তিনি।

আশরাফুল মোল্যা বলেন, আমি তার কাছে বিদেশ যাওয়ার সব কাগজপত্র চাইলে তিনি কাগজপত্র লাগবে না বলে জানান। সব কাগজ ফ্লাইটের ওঠার আগে আমার বড় ভাইকে বুঝিয়ে দেবে। তখন আমি তার কথা বিশ্বাস করি। তারপর আমি ফ্লাইটের দিন ২৮ তারিখে আমার বড় ভাইকে নিয়ে তাদের অফিসে আসি। সেখানে আরও ৫ থেকে ৬ জনকে দেখি অফিসে, তারাও ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসেছেন। পরে ওই দিন রাত ৯টায় ডুবাইয়ের উদ্দেশ্যে আমার বড় ভাইসহ আরও ৫ থেকে ৬ জনের ফ্লাইট হয়। আমার বড় ভাই ডুবাই গিয়ে পৌঁছালে আমাকে কল দিয়ে বলে যে, আমি এখন ডুবাই আছি। এখান থেকে ৫ দিন পরে ইতালির ফ্লাইট দেবে বলছে। এ বিষয়ে আমি মোজাম্মেলের সঙ্গে কথা বললে ওরা বলে যে, ওখান থেকে ইতালির ফ্লাইট দেবে।

তারপর ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে আমাকে আমার বড় ভাই ইমু নম্বরে কল দিয়ে বলে, আমি সহ আরও ৭ থেকে ৮ জনকে ইতালির ফ্লাইট না দিয়ে দালালের মাধ্যমে লিবিয়া নিয়ে আসে। আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মোজাম্মেল হোসেন ও তার স্ত্রী ফারজানাসহ অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে বলেন ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ইতালিতে যাবে। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করি। তারপর ১৫ দিন পরে আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পরে মার্চের ২৪ তারিখে আমাকে আমার বড় ভাই কল দিয়ে বলে যে, দালালরা আমাকে আটক করে রেখেছে। পাশাপাশি অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও অডিও ক্লিপ পাঠায় আমাকে। আমাকে বলে ভাইকে ওখান থেকে মুক্ত করতে হলে ২৫ লাখ টাকা দালালদের দিতে হবে। তারপর একথা শোনার পর দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ঢাকা অফিসে (ঢাকা হাওলাদার ট্রাভেলস) এসে অফিস বন্ধ পাই। তারপর মোজাম্মেল হোসেনের কথায় আমায় বড় ভাইয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকা দেই।

এ নিয়ে দালাল চক্রকে মোট ৩৫ লাখ টাকা দেই। কিন্তু তারপরও তারা আমার ভাইকে ছাড়েনি। পরে টাকা দেওয়ার ৬ মাস পার হয়ে গেলেও ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে আমি দাদাল মোজাম্মেলসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরে আমি এবং অন্য এক ভুক্তভোগীর বাবা চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি গুলশান থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করি।

ভুক্তভোগীর ভাই আশরাফুল বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামি মোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান আসামি করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। পরে গুলশান থানার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ মো. পলাশ হোসেন ৪ তারিখে আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডের জন্য থানায় হাজির করে।

গুলশান থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে তাল বাহানার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. পলাশ আসামির রিমান্ড নিয়ে গড়িমসি করে ও টাকার জন্য আমাদের হুমকি দেন। টাকা না দেওয়ায় মামলার সঠিক তদন্ত নিয়ে তালবাহানা করে। পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তিনি অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না।

তিনি আরও বলেন, এসআই মো. পলাশ মামলার ৪ নম্বর আসামি নওশেদ শিকদারকেও গ্রেপ্তার করতে অনীহা প্রকাশ করে। তারপর আমরা ৯৯৯ কল দিয়ে গুলশান থানার এস আই মশিউরের সহযোগিতায় নওশেদ শিকদারকে গুলশান থানার পার্শ্ববর্তী তাজ উদ্দিন আহমেদ পার্ক থেকে গ্রেপ্তার করে।

এসময় গ্রেপ্তার আসামি নওশাদ শিকদার, দালাল মোজাম্মেল হোসেন এবং আসামি মুন্না হাওলাদার অবৈধভাবে কীভাবে বাংলাদেশ থেকে লোক লিবিয়াতে পাচার করে সে সম্পর্কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. পলাশ হোসেনের সামনে বিস্তারিত জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি পাওয়ার পরও এসআই পলাশ কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেও জানান তিনি।

মামলার পলাতক আসামি মুন্না হাওলাদারসহ অন্যরা ভুক্তভোগীদের লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের অন্য সদস্য মো. তারেক (দিপু) এর কাছে আটকে রেখে আমাদের হুমকির পাশাপাশি মুক্তিপণের জন্য আরও ২০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলেও জানান তিনি।

এদিকে অন্য এক ভুক্তভোগী রিপন শিকদারের বাবা সাদেক শিকদার একই অভিযোগ তুলে বলেন, ছেলেকে পাঠানোর সময় ২১ লাখ টাকা দালালদের পরিশোধ করেন। পরে ভুক্তভোগী রিপনকে আটকে পাশবিক নির্যাতন করে সামাজিক যোগাযোগ ইমোর মাধ্যমে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও এবং অডিও পাঠিয়ে আরও ২৫ লাখ টাকা দাবি করে। আমি বিভিন্নভাবে আরও ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করি কিন্তু ৪ মাস পার হয়ে গেলেও তারা আমার ছেলেকে ছাড়েনি। বরং আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেছে। টাকা না দিলে তারা আমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top