বুধবার, ২৭শে আগস্ট ২০২৫, ১২ই ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


‘তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না...’


প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ১০:৫৪

আপডেট:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ২০:৩৩

ছবি সংগৃহীত

‘তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না।/ কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।/– নিশ্চল নিশ্চুপ/ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।’– গভীর অভিমানে, বেদনাবিধুর সুরে পঙ্‌ক্তিগুলো লিখেছিলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

সাম্য, প্রেম, দ্রোহের কবি যেন ধূমকেতুর মতোই আবির্ভূত হয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যে। পরাধীন ভারতবাসীকে শানিত পঙ্‌ক্তিমালায় জাগিয়ে দিয়েছিলেন, ছড়িয়ে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহসী সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি প্রেম ও মানবতার জন্য তিনি লিখেছিলেন কালজয়ী সব রচনা। শ্রমজীবী মানুষের শক্তি, মানবতার কবি তিনি। তাঁর সৃষ্টিকর্ম আজও আমাদের প্রেরণা, আমাদের শক্তি, আমাদের প্রতিবাদের ভাষা।


আজ ১২ ভাদ্র, বাংলা সাহিত্যের সেই প্রাণপুরুষের ৫০তম প্রয়াণবার্ষিকী। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের এই দিনে কবির মহাকাব্যিক জীবনের অবসান ঘটে। দীর্ঘদিন নির্বাক থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) ভারতের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেন নজরুল। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা নজরুল কৈশোরেই জীবনের দুঃখ-দুর্দশাকে আপন করে নেন। কখনও লেটো দলে গান গেয়েছেন, কখনও সেনাবাহিনীতে সৈনিক হয়েছেন, আবার কখনও সাংবাদিকতার মাধ্যমে লিখেছেন শোষিত মানুষের কথা। সব অভিজ্ঞতাই তাঁর সাহিত্যকে করেছে গভীর ও বাস্তবভিত্তিক।

বাংলা সাহিত্যে নজরুল ছিলেন এক অনবদ্য নাম। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিক, সম্পাদক, নাট্যকার, রাজনীতিবিদ ও সৈনিক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীক প্রতিবাদই ছিল তাঁর লেখনীর মূল সুর। তাঁর কলমে যেমন ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান বিদ্রোহ, তেমনি ছিল প্রেমের কোমল ছোঁয়া।

১৯২২ সালে প্রকাশিত বিদ্রোহী কবিতার মধ্য দিয়ে নজরুল বাংলা কাব্যে অভূতপূর্ব ঝড় তোলেন। তাঁর কবিতা ও গান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী জনতাকে উজ্জীবিত করেছিল। প্রকাশ করেছিলেন ধূমকেতু পত্রিকা, লিখেছিলেন কালজয়ী ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। এ জন্য তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর একটি গ্রন্থ তাঁকে উৎসর্গ করেছিলেন।

কেবল বিদ্রোহী কবিতা নয়, নজরুলের কলমে ফুটে উঠেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা। তিনি যেমন ইসলামী গজল লিখেছেন, তেমনি শ্যামাসংগীত ও ভক্তিগীতিও রচনা করেছেন। প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুরারোপ করে তিনি বাংলা সংগীতে সৃষ্টি করেছেন এক অমূল্য ভান্ডার, যা আজ নজরুলসংগীত নামে পরিচিত।

জীবনের মধ্যবয়সে দুরারোগ্য ব্যাধি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে তিনি সাহিত্য সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তাঁকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

ডিএম/রির্য়া


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top