এআই ভিডিও ঘিরে বিভ্রান্তি : প্রতারকদের ফাঁদ থেকে সাবধান
প্রকাশিত:
২ আগস্ট ২০২৫ ১২:০৯
আপডেট:
৩ আগস্ট ২০২৫ ০৩:৫৬

ফিলিপাইনের সামাজিক কল্যাণ বিভাগ (ডিএসডব্লিউডি) সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওকে “সম্পূর্ণ ভুয়া” আখ্যা দিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। এসব ভিডিওতে দাবি করা হয়, সরকার থেকে সব শিক্ষার্থীর জন্য ‘শিক্ষা সহায়তা ভাতা’ প্রদান করা হবে। অথচ বাস্তবে এমন কোনো সরকারি কর্মসূচি চালু নেই। বরং ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। যাতে রয়েছে ভিজ্যুয়াল ত্রুটি, জাল ওয়াটারমার্ক এবং ভুয়া ওয়েবসাইটের লিংক।
৯ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি স্কুল ক্যাম্পাসের মাঠে দাঁড়িয়ে ডিএসডব্লিউডি-এর লোগোযুক্ত টি-শার্ট পরা একজন ব্যক্তি ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি জানান, দেশের সব শিক্ষার্থীকে শ্রেণিভেদে নির্ধারিত টাকার শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হবে। সে জন্য একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হবে। ভিডিওতে সুপারইম্পোজড লেখা ছিল— “শিক্ষা সহায়তা বিতরণ শুরু ১২ জুলাই থেকে।”
ভিডিওতে ডিএসডব্লিউডি ও শিক্ষা বিভাগের লোগোও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেন এটি সরকারি উদ্যোগ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে ফেসবুক ক্যাপশনে ইংরেজি ও টাগালগ ভাষায় লেখা হয়: DSWD education cash assistance for everyone in school। সঙ্গে থাকে একটি রেজিস্ট্রেশন লিংক।
এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার
ভবিষ্যতের প্রযুক্তি হিসেবে স্বীকৃত এআই এখন ভুয়া তথ্য ছড়াতেও ব্যবহৃত হচ্ছে— এটাই যেন তার জীবন্ত উদাহরণ। ফেসবুক ও টিকটকে ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেগুলোতে রয়েছে গুগল-এর ভিও প্ল্যাটফর্মের ওয়াটারমার্ক। ভিও হলো গুগলের একটি ভিডিও জেনারেটিং টুল। যার মাধ্যমে আট সেকেন্ডের ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করা যায়।
এএফপি বলছে, ওই ভিডিও তৈরি হয়েছে তিনটি আট সেকেন্ডের এআই-জেনারেটেড ক্লিপ একত্রে জুড়ে দিয়ে। ভিডিও বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে— স্পিকারের পেছনে হাঁটা দুই শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে একে অপরের সঙ্গে ‘মিশে যাচ্ছে’। যা এআই ভিডিওতে দেখা যাওয়া সাধারণ ভিজ্যুয়াল ত্রুটির একটি।
সচেতনতা বার্তা ও সরকারি প্রতিক্রিয়া
ডিএসডব্লিউডি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ১১ জুলাই একটি পোস্টে জানিয়েছে, “এই ভিডিও ও পোস্টগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া। শিক্ষার্থীদের সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার মতো কোনো কর্মসূচি আমাদের নেই।” বরং ডিএসডব্লিউডি-এর এক প্রকৃত কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে জানানো হয়, যারা দরিদ্র শিক্ষার্থী তাদের জন্য ‘টিউটরিং বিনিময়ে সহায়তা’ দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীকে ছোটদের পড়াতে হবে। তারপর মূল্যায়ন সাপেক্ষে সহায়তা দেওয়া হয়।
দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ১৭ জুলাই তাদের অফিসিয়াল পেজ থেকে স্পষ্ট জানায়, “এআই তৈরি ভিডিও দিয়ে ছড়ানো এই তথাকথিত শিক্ষা ভাতা সহায়তার খবর একেবারেই ভুয়া। এগুলোতে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করছি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এআই প্রযুক্তির এই ধরনের অপব্যবহার ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সাধারণ মানুষ, বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা শিক্ষার্থীরা সহজেই এমন ভুয়া প্রচারণার শিকার হতে পারেন। কারণ এসব ভিডিওতে বাস্তবের মতো দৃশ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক লোগো ব্যবহার করা হয়, যা বিভ্রান্তি ছড়াতে কার্যকর।
এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে, প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন সুফল বয়ে আনতে পারে, তেমনি প্রতারণার নতুন পথও খুলে দিতে পারে। তাই নাগরিকদের উচিত— সরকারি সহায়তা বা যেকোনো স্কিম সম্পর্কিত তথ্য যাচাই না করে কোনো লিংকে ক্লিক না করা এবং যথাসম্ভব সরকারি সোর্স থেকে নিশ্চিত হওয়া। এমনকি পরিচিত কেউ শেয়ার করলেও চোখ বুজে বিশ্বাস না করে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: