ট্রলারে গরু তুলতে গলায় রশি বেঁধে চলে টানাটানি
প্রকাশিত:
২৮ জানুয়ারী ২০২৩ ২২:৩৫
আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ০১:৫৫

এক গরু ট্রলারে তুলতে কাজ করে ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক। একজন গরুর গলায় রশি দিয়ে ট্রলার থেকে টানছেন আর একজন নিচ থেকে গরুকে ধাক্কা দিচ্ছেন। ভয়ে এক পা এগিয়েও দুই পা পিছিয়ে নিচ্ছে গরু।
এমনি দৃশ্যের দেখা মেলে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটের চতলার খালে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু এনে এভাবেই ট্রলারে করে নৌ পারাপারের মাধ্যমে হাতিয়ায় নেওয়া হয়।
ট্রলারে তুলতে গরুর গলায় রশি বেঁধে চলছে টানাটানি। ট্রলারের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে না পেরে দুইবার নদীতে পড়ে যায় গরুটি। তবু চলছে টানাটানি। শ্রমিকেরা টেনে হিঁচড়ে, প্রচণ্ড আঘাত করে আবার কখনো নাকের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে গরুগুলোকে ট্রলারে তোলেন। মূলত ঘাটে পল্টুনের অভাবেই নির্মমতার শিকার হয় এই অসহায় প্রাণীগুলো।
শ্রমিক আইয়ুব মাঝি বলেন, গরুগুলোকে মাটি থেকে ট্রলারে উঠাইতে হয়। পল্টুন থাকলে ভালো হইতো কিন্তু যেটা নাই সেটার কথা বলে লাভ নাই। যখন গরু ট্রলারে উঠতে চায় না তখন আমরা এক পা তুলে দেই। এরপর না উঠতে চাইলে দুই পা ট্রলারে তুলে দেই। তাও উঠতে না চাইলে পিছন থেকে ধাক্কা দেই। কিছু রাগ করে উঠাইতে হয়, আবার কিছু হালকা কষ্ট দিয়ে উঠাইতে হয়।
৪০ বছর ধরে গরু ট্রলারে গরু আনা নেওয়া করছেন শ্রমিক মো. রিয়াজ। তিনি বলেন, আজকে বগুড়া থেকে গরুগুলো হাতিয়া নিচ্ছি। ৪০ বছর ধরে এ পেশায় আছি। কোনো গরু কসাইদের কাছে যাবে আবার কোনোটা মানুষ পালবে। আমার দায়িত্ব পারাপার করে দেওয়া, পারাপার করছি।
মো. রিয়াজ আরও বলেন, পাটাতনের সঙ্গে টেনে গরু উঠাতে হয়। দীর্ঘদিনের কাজ তাই সব কৌশলই জানি। নদী উত্তাল থাকলে গরু ভয় পায় তখন ট্রলার বন্ধ রাখি। আবার স্বাভাবিক হলে পারাপার করি। বড় ট্রলার হলে গরু ৩০/৩৫টি উঠে আর ছোট ট্রলারে ২০টি উঠে।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী রফিকুজ্জামান বলেন, হাতিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদের জন্য খুব সম্ভাবনার স্থান। দিন দিন সেখানে খামারিদের সংখ্যা বাড়ছে। বিপননের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে হয়। কিন্তু গরু, মহিষ, ভেড়া ট্রলারে পারাপারে খুব নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় এবং তা ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ঝুঁকিমুক্ত পরিবহন করতে হলে ফেরি বা সি বোটের প্রয়োজন আছে। তাহলেই গবাদি পশু নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নৌ পারাপারের জন্য ফেরি দেওয়া যায় কিনা সেটা নিয়ে পর্যবেক্ষক দল সরেজমিনে হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে এসেছেন। উনারা ফিজিবিলিটি টেস্ট করেছেন। তবে আমরা ফলাফল এখনো হাতে পাইনি। রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে কবে থেকে ফেরি চলাচল হবে। আমরা সবাই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: