বৃহঃস্পতিবার, ৮ই মে ২০২৫, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


মৌসুমে বিক্রি হয় লাখ টাকার ‘পারন’


প্রকাশিত:
২৯ জানুয়ারী ২০২৩ ০১:৪৫

আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ০১:৩৯

ছবি সংগৃহিত

হাইল হাওরের বাইক্কা বিল তীরের গ্রাম বরুনা। এই গ্রামেই প্রতি মৌসুমে বিক্রি হয় লাখ টাকার ‘পারন’। ছোট মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত এই পারন কিনে নেন হাওরের মাছচাষী ও জেলেরা। বরুনা গ্রাম প্রায় অর্ধশত পরিবারের জীবিকার অন্যতম উৎস এই পারন।

বাড়ির উঠানে বাঁশ আর বেত নিয়ে বসেছেন কল্পনা রাণী সরকার। নিজের হাতে বানাচ্ছেন পারন। বাশেঁর কাটির সঙ্গে সুতো বেঁধে তৈরি হয় এটি। তারপাশে বসে পারন বানাচ্ছেন বাড়ির অন্যান্য নারীরাও। এই ভাবে তিন থেকে চারদিন কাজ করে তৈরি হয় একটি পারন। তার মতোই বাড়ির অন্যান্য নারী ও পুরুষরা এই পারন বানানোর কাজ করেন। যুগ যুগ ধরের এই বাড়িতে পারন বানানোর কাজ হচ্ছে, যা বাড়িতে এসে কিনে নেন স্থানীয় মৎসজীবীরা।

কল্পনা রানী সরকার বলেন, একটা পারন বানাতে তিন থেকে চারদিন সময় লাগে। মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরাও এই কাজ করেন। যারা পারন কেনে তারা বাড়িতে এসে কিনে নিয়ে যায়। একটি বড় বাঁশ দিয়ে বারোটির মতো পারন বানানো যায়। বিশটি পারন বানাতে ষোলশত খেকে সতেরো শত টাকা খরচ হয়ে যায়। দুই হাজার থেকে দাইশো টাকায় বিক্রি করি। পারন দিয়ে মাছ ধরা হয়। দেশী ছোট মাছ ধরতে এগুলো ব্যবহার হয়। এসব বানিয়ে আসলে এখন আর তেমন লাভ হয় না।

ঠাকুর মনি সরকার বলেন, আমি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে পারন বানাচ্ছি। এটা আমাদের বাবা দাদার আমল থেকে করে আসছি। আসলে শেষমেষ পুষায় না। জান বাঁচিয়ে কোনোরকম চলা যায়। বাঁশ, বেত, সুতা, কপালি লাগে। এসব কিছু কিনে আনতে হয়। ঘরের সবাই মিলে কাজ করে লাভ চার থেকে পাঁচশ থাকে। এটার দ্বারা আমদের চলে না। এই শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এটা আসলে মৌসুমী ব্যবসা। কেউ বিশ ত্রিশ হাজার টাকার পারন বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে এই গ্রামে লাখ টাকার বেশি পারন বিক্রি হয়।

নগেন্দ্র সরকার বলেন, পাঁচিশ বছর ধরে পারন বানাচ্ছি। এখনও বৃদ্ধ বয়সে বানাতে পারি। আমাদের পরে আর কেউ পারন বানাবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ আমাদের ছেলে মেয়েরা আর এসব কাজ করে না। তাদের কেউ লেখাপড়া করে কেউ অন্যকাজ করে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের বরুনা গ্রামে হিন্দুপাড়ায় পারন বিক্রি হয়। সেখানে আসা ক্রেতা জেন্টু মিয়া বলেন, বরুনার মনাগাঁও এ এসেছি পারন কিনতে। আমি হাওরে একটি বিল লিজ নিয়েছি। সেখানে গিয়ে পারন দিয়ে মাছ ধরবো। মাছ বিকেলে এনে বাজারে বিক্রি করব। এটা আমার জীবিকা।

বাইক্কা বিলের বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী বলেন, এই গ্রামের অংসখ্য লোক পারন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মৌসুমে লাখ লাখ টাকার পারন বিক্রি হয়। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মাছ ধরার কাজে পারন এর ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এটা আমাদের ঐতিহ্য বলা যায়। এটিকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top