শুক্রবার, ১৫ই আগস্ট ২০২৫, ৩১শে শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


গাজীপুর বিআরটিএ : সেবাগ্রহীতাদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই


প্রকাশিত:
১ মার্চ ২০২৩ ০২:৫৫

আপডেট:
১৫ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৪১

ফাইল ছবি

গাজীপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিসে সার্ভার বিকলসহ নানা সমস্যায় ভোগান্তি পোহাতে হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন, মালিকানা পরিবর্তন, ফিঙ্গার প্রিন্টসহ সেবা নিতে আসা লোকজনদের। এ নিয়ে সেবাগ্রহীতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতারা এ ভোগান্তির কথা জানান।

টঙ্গীর মরকুন এলাকা থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙুলের ছাপ) দিতে রোববার সকালে গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে আসেন মো. রায়হান। তিনি বলেন, আমি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাই, মাঝেমধ্যে ভাড়াও দিই। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে সকাল ৯টায় এই অফিসে আসি। অনেক সময় অপেক্ষা করে সিরিয়াল পেয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে যাই। কিন্তু সার্ভার জটিলতায় দিতে পারিনি। ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কয়েকবার ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার দায়িত্বে থাকাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সার্ভার না থাকার কথা জানান।

টঙ্গীর হায়দারাবাদ এলাকার মো. মোস্তাহার রহমান প্রায় নয় মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেন, আবেদনের পর বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ, চিকিৎসকের সনদ ও গত ৬ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আজ ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়। ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৯টায় অফিসে এলেও সার্ভার জটিলতায় বেলা সাড়ে ১২টায়ও তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকা থেকে গাড়ির রোড পারমিট, ফিটনেসসহ অন্যান্য কাগজপত্র নবায়ন করতে এসেছেন উজ্জ্বল মিয়া নামের এক পিকআপচালক। তিনি বলেন, রাতভর গাড়ি চালিয়ে চোখে ঘুম নিয়ে সকালে বিআরটিএ অফিসে কাগজপত্র নবায়ন করতে এসেছি। আসার পর একাধিকবার চেষ্টা করেও গাড়ির কাগজ নবায়ন করতে পারিনি। রাতে আবার গাড়ি নিয়ে ট্রিপে যাব, তাই আজকের মতো চলে যাচ্ছি। আবার সুযোগ করে আসতে হবে।

ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার দায়িত্বে থাকা গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের এক অপারেটর পরিচয় প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে বলেন, রোববার সকাল থেকেই বিআরটিএ নির্ধারিত সার্ভারে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না। যার কারণে লাইসেন্সের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে আসা সেবাগ্রহীতারা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। দুপুর পর্যন্ত সার্ভার বন্ধ থাকায় অনেকেই ফিঙ্গার প্রিন্ট না দিয়ে ফিরে গেছেন।

২০১৯ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন নুরুল আমিন নামের এক গার্মেন্টস শ্রমিক। রোববার দুপুরে গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, আবেদনের পর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৯ সালের শেষের দিকে যথারীতি ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়া হয়। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর লাইসেন্স ডেলিভারি দেওয়ার কথা বলে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ দেওয়া হয়। ডেলিভারির দিন হাজির হলে কার্ড না আসার কথা জানানো হয়। এরপর একাধিকবার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করা হলে প্রিন্টিং জটিলতার কথা জানানো হয়। ২০১৯ সাল থেকে অপেক্ষা করছি এই ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য।

একই কথা জানান কাপাসিয়ার আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লার্নার কার্ড পাই। এরপর ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ফিঙ্গার প্রিন্ট সম্পন্ন করি। এরপর আমাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ দেওয়া হয়। পরে করোনার প্রকোপ শুরু হলে আর যোগাযোগ করা হয়নি। ২০২১ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করা হলে প্রিন্টিং জটিলতার কথা জানিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এতদিন পর এখনো লাইসেন্স হাতে পাইনি।

দীর্ঘ সময়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আরেক ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, সব নিয়ম মেনে ফিঙ্গার প্রিন্ট সম্পন্ন করেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছি না। অফিসে যোগাযোগ করলে পরে আসার কথা বলা হয়। সবশেষ আমাকে বলা হয়েছে আবেদন কপি, ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ, লার্নার কার্ডের ফটোকপিসহ যোগাযোগ করতে। কিন্তু আমার কাছে কোনো ফটোকপি নেই। যদি এই কাগজগুলো জমা না দেওয়া হয় তাহলে নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করতে বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একবার টাকা জমা দিয়ে লার্নার কার্ড নিয়েছি, মেডিকেল সার্টিফিকেট করেছি, পরীক্ষা দিয়েছি। এখন যদি
নতুন করে আবেদন করতে হয় তাহলে পুরো প্রক্রিয়া আবার করতে হবে। এটা চরম ভোগান্তি, এক প্রকার অন্যায়।

এ বিষয়ে বিআরটিএ গাজীপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু নাঈম বলেন, সার্ভারে যখন নতুন কোনো তথ্য
আপডেট করা হয় তখনই সার্ভারে সমস্যা দেখা দেয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকায় জানিয়ে দিই। এজন্য কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করি।

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের দীর্ঘসূত্রিতা তো এখন নেই। মানুষ ফিঙ্গার প্রিন্ট দিচ্ছে আর লাইসেন্স পাচ্ছে। আগামীতে যেদিন ফিঙ্গার প্রিন্ট দেবে সেদিনই লাইসেন্স পাবে। আমরা লাইসেন্স পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাইকিং করেছি, তারপরও মানুষ লাইসেন্স ডেলিভারি নেয়নি।

মো. আবু নাঈম বলেন, ২০১৯ সালে প্রিন্টিং-এর দায়িত্বে ছিল টাইগার আইটি। তখন সারা দেশে সাড়ে ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং পেন্ডিং ছিল। এখন প্রিন্টিং-এর দায়িত্বে আছে এমএসপিপিএল। ২০১৯ সালে যারা টাইগার আইটির অধীনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েছিল, তাতে ফিঙ্গার প্রিন্ট মিসিং বা কোনো পেপারে স্ক্যানিং মিসিং থাকতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি এ সমস্যাগুলো ওভারকাম করতে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top