বৃহঃস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক

নির্বাচন-বিচার-সংস্কার নিয়ে আলোচনা হলেও তা সুনির্দিষ্ট নয়


প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪১

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:২৯

ছবি সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক হয়েছে। তবে সেটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল না। রাজনৈতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, নির্বাচন, বিচার ও জাতীয় সংস্কার বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হলেও তা সুনির্দিষ্ট নয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন পর স্বজনদের কাছে পেয়েছেন। তিনি স্বস্তিবোধ করছেন বলে মনে হয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমানের ইইউ সফর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের করা এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির ইইউ সফরের ফিরিস্তি তুলে ধরেন ও নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণই নির্যাতিত হয়েছে। নির্যাতিত দল হিসেবে প্রথম আঘাত ও শেষ আঘাত জামায়াতে ইসলামীর ওপরে এসেছে। প্রথমে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়। ব্রিটেনের একটি এপেক্স কোর্ট এ সংক্রান্ত একটি রায় দিয়ে বলেছে, এটা ছিল বিচারের গণহত্যা। এটা কোনো বিচার ছিল না। শেষ আঘাতটা ছিল আমাদের নিষিদ্ধ করা, যা অন্য কোনো দলকে করা হয়নি। আমরা মজলুম। আমরা আমাদের অনেক নেতা সঙ্গী হারিয়েছি। অনেকে পঙ্গু হয়েছেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও অনেক সঙ্গী-সাথী হারিয়েছে। আমরা আয়নাঘরের শিকার হয়েছি। তারাও হয়েছে। লাখে লাখে জেলে গেছে। ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়াও জুলুমের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি একদিকে মজলুম, অন্যদিকে অসুস্থ।

দেশ থেকে যাওয়ার আগে যেকোনো কারণে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে উঠেনি। ইউরোপ সফরে গিয়েছি। ইউকের কাছের দেশ বেলজিয়াম। আমরা ব্রিটেনে গিয়ে লন্ডনে ঢুকেই প্রথমে তার (বেগম জিয়া) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারা অত্যন্ত ভালোবাসা ও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাকে দেখা। তিনি অবস্থান করছেন তার বড় সন্তান ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায়। সঙ্গত কারণে ওই সাক্ষাতে তিনিও থাকবেন, এটিই স্বাভাবিক।

জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, দুজন বাংলাদেশি মানুষ পরিচয় ছাড়াই চা খেতে গিয়েও রাজনৈতিক আলাপ শুরু করে দেন। সেখানে আমরা দুটি দলের দায়িত্বশীল নেতারা একসঙ্গে বসবো আর রাজনৈতিক কথাবার্তা হবে না, তা তো বাস্তব নয়।

শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের কথা হয়নি। কখন নির্বাচন হবে, কীভাবে হবে, সংস্কার, বিচার কীভাবে হবে—বিভিন্ন বিষয়ে সাধারণ আলোচনা করেছি। তবে সেটা সুনির্দিষ্ট ছিল না।

তিনি বলেন, যেহেতু এটা ফরমাল কোনো মিটিং ছিল না, সেজন্য বিএনপিও জানায়নি, আমরাও দরকার মনে করিনি। আমাদের ভিজিটের মূল উদ্দেশ্য ছিল একজন অসুস্থ সম্মানিত সহকর্মীকে দেখা। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে মিডিয়াগুলো যে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের পাওয়ার অনেক কিছু আছে। আমরা এগুলোকে স্বাগত জানাই। মিডিয়ার এই চর্চাগুলো চলতে থাকুক।

জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, যদি আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচন দেখেন, তাহলে এটা কোনো বিরোধই নয়। সেখানে তো বাকযুদ্ধ হয়েছে অনেক। ওই নির্বাচনের পর হ্যান্ডশেক। একদল সরকারে, আরেক দল বিরোধী দলে। এখন তারা মিলেমিশে দেশ চালাবে, এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে আমরা চাই মতপার্থক্য থাকুক। মতপার্থক্য না থাকলে রাজনীতিবিদরা অন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ চোখ খুলে দেওয়ার জন্যই প্রয়োজন মতপার্থক্য। তবে আমরা এটাও প্রত্যাশা করি যে এই মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। পার্থক্য পর্যন্তই থাকুক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনীতিবিদরা অনেক সময় এটা খেয়াল করেন না। এটা করতে হবে। যদি আমরা দেশকে ভালোবাসি, তাহলে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার জায়গা থেকে আমাদের পারস্পরিক সম্মানের জায়গায় আসতে হবে। আমার মতামত আমি দেব। কিন্তু আমি এটা বলতে পারবো না যে এটিই করতে হবে। বরং আমি মতামত দেব যে এটি করলে জাতি উপকৃত হবে। আর এটা আমি করতে দেবো না যে যাই হোক, এটা কিন্তু গণতন্ত্র বা রাজনীতির ভাষা নয়। করতেই হবে, যেমন ভাষা নয়, তেমনি করতে দেবো না সেটাও ভাষা নয়। অনেক সময় আমরা এই সীমানাটা মানি না, আমাদের এটা মানতে হবে।

তিনি (খালেদা জিয়া) দেশে কবে ফিরবেন, সে ব্যাপারে কথাবার্তা হয়নি। তবে ধারণা করি, তিনি হয়তো আগামী মাসে ফিরবেন। তার ফেরাই উচিত, এই দেশ তো তার।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন দলটির সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, অধ্যাপক ইজ্জত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top