ভারত পানি ব্যবহার করছে মারণাস্ত্র ও যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে: মির্জা আব্বাস
প্রকাশিত:
৪ মে ২০২৫ ১৮:৩৪
আপডেট:
৪ মে ২০২৫ ২৩:৫৩

পানি কখনোই মারণাস্ত্র হতে পারে না, যুদ্ধের অস্ত্রও হতে পারে না। কিন্তু একমাত্র ভারতই বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা পানি যুদ্ধের অস্ত্র ও মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
রোববার (৪ মে) বিকেলে তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত গণপদযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি রংপুর নগরীর শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা ভারতের কাছে কিছু চাই না, শুধু পানি চাই। আমরা বকশিশ চাই না, ভিক্ষা চাই না—আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যার পানি চাই। আজ না হোক, কাল দিতে হবে। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। পূর্ববর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে এই হিসাব-নিকাশ করেনি, কারণ তারা সরকারে থাকার ইচ্ছায় ভারতকে চাপে ফেলেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে ভারতের অনেক কিছু রয়েছে—মংলা পোর্ট, চট্টগ্রাম পোর্ট—সব হিসাব করতে হবে। হিসাব করার সময় এসেছে। আমাদের তিস্তার পানি চাই, ফারাক্কার পানি চাই। দেশের যেখানে পানি দরকার, সেখানে তা দিতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বহু আগেই পানির ন্যায্য হিস্যা পেতাম যদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী সরকার না আসতো। তারা ভারতের কাছে কোনো দিন পানির দাবি তুলতে পারেনি।’
এ সময় তিনি বিএনপি নেতা আসাদুল হাবীব দুলুকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দুলু উত্তরবঙ্গের প্রতিবাদী কণ্ঠ, একজন কৃতি সন্তান। তাই দুলু, তুমি সাবধানে থাকবে। ভারত কখনও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সহ্য করতে পারে না। এর আগেও সুরমা নদীর বাঁধ ইস্যুতে ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে।’
মির্জা আব্বাস তিস্তা আন্দোলনের আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, ‘তিস্তা আন্দোলন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমি এই আন্দোলনের সঙ্গে আছি এবং থাকবো।’
গণপদযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ।
এদিকে গণপদযাত্রাকে কেন্দ্র করে দুপুর ১টা থেকে তিস্তা নদীবেষ্টিত বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে হাজারো মানুষ রংপুর শহরে আসতে শুরু করেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নামে। “জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই”—এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে শাপলা চত্বর এলাকা। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে রংপুর শহরে সৃষ্টি হয় জনস্রোত। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়কগুলোতে। এই গণপদযাত্রা শাপলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষক সংগঠন, শ্রমজীবী মানুষ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পদযাত্রাটি এক বিশাল গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে নদীপারের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এতে অংশ নেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা পাড়ের মানুষ ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই‘ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে একযোগে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ব্যতিক্রমধর্মী এই কর্মসূচিতেও লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
তবে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিস্তা নিয়ে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: